News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৫৪, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

রবিবার থেকে কলমবিরতির হুঁশিয়ারি বিচারকদের

রবিবার থেকে কলমবিরতির হুঁশিয়ারি বিচারকদের

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) দেশের সব আদালত, বিচারকের বাসস্থান ও যাতায়াতপথে অবিলম্বে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনসহ দুটি দাবিতে সরকারের কাছে জরুরি পদক্ষেপ চেয়েছে। দাবি মেনে নিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে জানানো হয়েছে- সময়সীমার মধ্যে ব্যবস্থা নিলে বিচার কার্যক্রম চলবে, অন্যথায় রবিবার (১৬ নভেম্বর) থেকে সারাদেশে একযোগে কলমবিরতি পালন করবেন বিচারকেরা।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ আল্টিমেটাম জানানো হয়।

অ্যাসোসিয়েশনের উত্থাপিত দুটি দাবি হলো, 

১. দেশের প্রতিটি আদালত, ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকের সরকারি/ভাড়া বাসস্থান এবং যাতায়াতের সময়ে স্থায়ীভাবে নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ।

২. রাজশাহীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারকের পরিবারের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া এবং গ্রেপ্তার আসামিকে আইন বহির্ভূতভাবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে অপেশাদার আচরণ প্রদর্শনের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।

বিবৃতিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট বহুবার আদালত ও বিচারকদের নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে সরকারকে লিখিতভাবে অনুরোধ করলেও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ অবস্থায় বিচারকেরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও তারা ও তাদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই কার্যত নিরাপত্তাহীন অবস্থায় আছেন।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজার প্রত্যাশা চিফ প্রসিকিউটরের

বিজেএসএ জানায়, জেলা পর্যায়ের অনেক বিচারকের সরকারি আবাসন নেই, নেই পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধাও। বিশেষ করে চৌকি আদালতে কর্মরত বিচারকদের জন্য পরিস্থিতি আরও শোচনীয়—অরক্ষিত ভাড়া বাসায় থাকতে হয়, রিকশা-ভ্যানে করে কিংবা কখনও হেঁটেই যাতায়াত করতে হয়।

অ্যাসোসিয়েশনের ভাষায়, বিচার বিভাগের প্রতি দীর্ঘদিনের উদাসীনতা ও গাফিলতিই আজকের মর্মান্তিক বিপর্যয়ের মূল কারণ।

রবিবার সকল বিচারক নিজ নিজ কর্মস্থলে কালো ব্যাজ ধারণ করবেন বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

দাবি ও ক্ষোভের কেন্দ্রে রয়েছে রাজশাহীতে ঘটে যাওয়া বিচারকের ছেলেকে হত্যা করার ঘটনা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী নগরের ডাবতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় হামলাকারী লিমন মিয়া (৩৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালালে নিহত হন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাওসিফ রহমান (১৭/১৮)- তিনি রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুর রহমানের ছেলে।

হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার (৪৪)। ধস্তাধস্তিতে হামলাকারী লিমনও আহত হয়ে বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।

এই হত্যাকাণ্ডকে অ্যাসোসিয়েশন “লোমহর্ষক, বর্বরোচিত এবং বিচার বিভাগের প্রতি চরম উদাসীনতার ফল” বলে উল্লেখ করেছে।

সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনায় পুরো বিচার বিভাগ স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ। বিচারকের পরিবারে দিনের আলোয় এমন হামলা বিচার বিভাগকে অতিমাত্রায় বিপন্ন করেছে। রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিচারকরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকলেও, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালিত হয়নি। এই রক্তের দায় কোনোভাবে এড়ানো যাবে না।

বিজেএসএ স্পষ্ট জানিয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, নইলে রোববার থেকে সারাদেশের বিচারকেরা সীমিত নয়, সম্পূর্ণরূপে কলমবিরতি পালন করবেন। এতে দেশের সব আদালতের বিচার কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়