তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে চূড়ান্ত শুনানি মঙ্গলবার

ফাইল ছবি
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে করা একাধিক আপিল আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর)। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ শুনানি গ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে মামলাটি আপিল বিভাগের মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এর আগে গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দিয়েছিল আপিল বিভাগ। আদালত তখন জানিয়েছিল, এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে—যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দিনটি নির্ধারিত হয়।
১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম. সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রিট খারিজ করেন। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে।
এরপর সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়। সংশ্লিষ্ট গেজেট প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের ৩ জুলাই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের পর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২4 সালে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে, যা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক বড় পরিবর্তন আনে।
আরও পড়ুন: জুলাই হত্যার মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে, তদারকিতে কমিটি
সরকার পতনের পর সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক গত ২৭ আগস্ট ২০২৪ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান।
অন্য আবেদনকারীরা হলেন প্রফেসর তোফায়েল আহমেদ (প্রয়াত), এম. হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভুঁইয়া, জাহরা রহমান।
এরপর পর্যায়ক্রমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (১৬ অক্টোবর), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার (২৩ অক্টোবর) এবং নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথকভাবে একই ধরনের আবেদন দাখিল করেন।
ফলে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক উদ্যোগ মিলিয়ে বর্তমানে মোট চারটি রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে একত্রে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে।
গত ২৭ আগস্টের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে এনে আমরা কোনো সাময়িক সমাধান চাই না। আমরা চাই একটি কার্যকর ও টেকসই নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা, যা ভবিষ্যতে গণতন্ত্রকে দৃঢ় করবে।
রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, গত দেড় দশকে দেশে গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। মানুষ গুম, খুন ও রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে। জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধার এখন সময়ের দাবি।
আইনজীবী মহলের মতে, এই শুনানির মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নতুন মোড় নিতে পারে। আদালতের রায় দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসন, গণবিশ্বাস পুনর্গঠন ও স্থিতিশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখতে পারে বলেও অনেকে আশা প্রকাশ করেছেন।
২১ অক্টোবরের এই শুনানিকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আপিল বিভাগের এই রায় শুধু একটি সংবিধানিক প্রশ্ন নয়—এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গণতন্ত্র পুনর্গঠনের পরীক্ষাক্ষণ হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি