বাংলাদেশি আত্মীয়দের ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ ব্রিটিশ মেয়রের বিরুদ্ধে

ছবি: সংগৃহীত
লন্ডনের এনফিল্ড কাউন্সিলের মেয়র ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাজনীতিক মোহাম্মদ আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৪১ জন আত্মীয়–স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জন্য ভিসা আদায়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের এবং জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ–এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেয়র পদে থাকা অবস্থায় আমিরুল ইসলাম তার পদমর্যাদা এবং কাউন্সিলের অফিসিয়াল লোগো ব্যবহার করে ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনে একাধিক চিঠি পাঠিয়ে আত্মীয়–স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ভিসা আবেদন “বিশেষভাবে বিবেচনা” করার অনুরোধ জানান।
চিঠিগুলোতে বলা হয়েছিল, তারা তার মেয়র পদে অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন, তাই দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ প্রয়োজন।
টেলিগ্রাফের হাতে আসা চিঠিগুলোতে দেখা গেছে, কিছু চিঠি অফিসিয়ালভাবে পাঠানো হলেও, অনেকগুলো চিঠি তিনি নিজে তৈরি ও জালিয়াতি করে পাঠিয়েছিলেন যাতে সেগুলো সরকারি চিঠি মনে হয়।
তদন্তে উঠে আসে, অনেক চিঠিতে ভিসা প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য পাসপোর্ট নম্বর ও জন্মতারিখের মতো সংবেদনশীল তথ্যও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
২০২৪ সালের মে মাসে ব্রিটিশ হোম অফিস এনফিল্ড কাউন্সিলকে জানায় যে ঢাকায় কিছু সন্দেহজনক চিঠি পৌঁছেছে। এরপর কাউন্সিল একটি ১৬০ পৃষ্ঠার গোপন তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মেয়র হওয়ার আগেও আমিরুল ইসলাম এ ধরনের একাধিক চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
তদন্তে দেখা গেছে, মেয়রের দপ্তর থেকে মোট ১৩টি চিঠি পাঠানো হয়েছিল, এছাড়া তিনি নিজে আরও ৬টি জালিয়াতি করে পাঠিয়েছেন। বাকি ১১টি চিঠির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততারও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে এই ৪১ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত কেবল একজন বাংলাদেশি অতিথি অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কুয়ালালামপুরে অভিযান, বাংলাদেশিসহ গ্রেফতার ১৯৬ বিদেশি
তদন্তকারীদের কাছে আমিরুল ইসলাম দাবি করেন, অতীতে এনফিল্ডের অন্য মেয়ররাও আত্মীয়দের ভিসা প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতেন, এবং তিনিও সেই নজির মেনে কাজ করেছেন।
তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মেয়রের শপথ অনুষ্ঠানে অতিথিদের আনতে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ গ্রহণযোগ্য হলেও, ব্যক্তিগত স্বার্থে পদ ব্যবহার করা সীমা অতিক্রমের মধ্যে পড়ে এবং এই ঘটনায় কাউন্সিলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
চিঠিগুলোর কিছু তারিখ শপথ অনুষ্ঠানের প্রায় এক বছর আগের হওয়ায় উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ আরও বৃদ্ধি পায়। তদন্তে বলা হয়েছে, এসব চিঠিতে উল্লেখ ছিল যে অতিথিদের উপস্থিতি তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের সব ব্যয়ভার আমিরুল ইসলাম বহন করবেন।
আমিরুল ইসলাম ২০২৫ সালের মে মাসে মেয়র হিসেবে এক বছর পূর্ণ করেন। অভিযোগ প্রকাশের পরও তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন যে তিনি কোনো অপরাধ করেননি।
বরং তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি এজেন্সি তার স্বাক্ষর জাল করে ভিসা প্রক্রিয়ায় সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছিল, এবং তিনি বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশের কাছে জানিয়েছিলেন।
স্থানীয় রাজনীতিতেও এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এনফিল্ড কাউন্সিলের কনজারভেটিভ দলের নেতা ক্লার জর্জিও আলেসান্দ্রো বলেন, কাউন্সিল এই অভিযোগ আগে থেকেই জানত, তবুও তাকে মেয়র করা হয়েছে। এটি পুরো কাউন্সিলের জন্য লজ্জার বিষয়। তার অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।
অভিযোগ প্রকাশের পর ২০২৫ সালের জুনে লেবার পার্টি আমিরুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। বর্তমানে তিনি স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এনফিল্ড কাউন্সিল জানায়, তারা তদন্তের ফলাফলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে।
এছাড়া আমিরুল ইসলামকে কিছু বিধিনিষেধ মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—আর কোনো ভিসার জন্য সুপারিশ না করা, আচরণবিধি বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং সাবেক মেয়রের ব্যাজ ব্যবহার না করা।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানায়, বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন।
তারা বলেছে, সব ধরনের অভিবাসন অপরাধের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি