News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজ দেশে বিমান হামলায় পাকিস্তানে নারী-শিশুসহ নিহত ৩০

নিজ দেশে বিমান হামলায় পাকিস্তানে নারী-শিশুসহ নিহত ৩০

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের তিরাহ উপত্যকায় বিমান হামলায় অন্তত ৩০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। 

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোর ২টার দিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনী এ হামলা চালায়।

হামলায় ৮টি চীনা এলএস-৬ লেজার-নিয়ন্ত্রিত বোমা ব্যবহার করা হয়েছে, যা চীনে তৈরি জে-১৭ যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা হয়।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিরাহ শহরের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা এক সাক্ষাৎকারে জানান, নিহতদের মধ্যে সাতজন নারী ও চারজন শিশু রয়েছে। 

তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিমান চারটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামলার লক্ষ্য ছিল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর একটি বোমা তৈরির কারখানা। 

তারা দাবি করেছে, টিটিপি আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত হয় এবং কাবুল সরকারের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র রয়েছে। তবে আফগান তালেবান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। 

খাইবার পুলিশের দাবি, দুই টিটিপি কমান্ডার—আমান গুল ও মাসুদ খান গ্রামে বোমা তৈরির কার্যক্রম চালাচ্ছিল এবং সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিল। তৈরি করা বোমাগুলো কাছের মসজিদে জমা রাখা হচ্ছিল।

এই হত্যাকাণ্ড স্থানীয় মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। প্রদেশটিতে গত কয়েক বছরে বেড়ে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার কারণে জনমনে আগেই অস্থিরতা ছিল। গত সপ্তাহে সোয়াত ভ্যালির মিংগোরা শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে দ্রুত শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছে। 

দলের খাইবার শাখা এক্স-এ লিখেছে, এই শোক ও বেদনা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। ড্রোন হামলা ও বোমাবর্ষণ ঘৃণার অসংখ্য বীজ বপন করেছে।

আরও পড়ুন: সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সতর্ক ভারত

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া শাখা জুন মাসে এক বিবৃতিতে বলেছিল, পাকিস্তান সরকারের “নাগরিক জীবনের প্রতি উদ্বেগজনক উদাসীনতা” আছে। এর আগে মার্চ মাসে খাইবার প্রদেশের কাটলাং এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ১০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন। 

স্থানীয় সরকারের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাঈফ জানান, গোয়েন্দা তথ্যে ওই এলাকা সন্ত্রাসীদের আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে জেনে অভিযান চালানো হয়েছিল। স্থানীয়রা নারী-শিশুসহ ১০টি লাশ উদ্ধার করেন।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এটি আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এবং দুর্গম পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির জন্য সন্ত্রাসীদের জন্য আদর্শ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান আগ্রাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের আইএসআই-এর সহায়তায় প্রতিরোধযোদ্ধাদের অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করে। যুদ্ধ শেষে এসব যোদ্ধা ও বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার খাইবার অঞ্চলে রয়ে যায়। পরবর্তীতে এখানেই গড়ে ওঠে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি।

২০০০-এর দশকের শেষ দিকে গঠিত হয় টিটিপি। পাকিস্তানের দাবি, এ গোষ্ঠী আফগানিস্তানে ঘাঁটি বানিয়ে সীমান্তের গোপন টানেল ও পথে পাকিস্তানে প্রবেশ করে হামলা চালায়। সম্প্রতি নিষিদ্ধ সংগঠন যেমন জইশ-ই-মোহাম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিনও খাইবারে নতুন ঘাঁটি গড়ছে। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর এসব গোষ্ঠী গভীর পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেছে।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তান সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের ফলস্বরূপ সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা সরকারের বিরুদ্ধে জনমনে অসন্তোষের সৃষ্টি করছে।

এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের মানবিক দিক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়