News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৩২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো

গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো

ছবি: সংগৃহীত

গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আনা প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছে। এর ফলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইসরায়েলের সব ধরনের বাধা তুলে নেওয়া এবং হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তির আহ্বান সত্ত্বেও প্রস্তাবটি কার্যকর হলো না। প্রায় দুই বছর ধরে চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ ভেটো।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে নির্বাচিত ১০ সদস্য দেশ প্রস্তাবটি খসড়া করে। 

এর মধ্যে ছিল— আলজেরিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, গায়ানা, পাকিস্তান, প্যানামা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন, স্লোভেনিয়া ও সোমালিয়া। প্রস্তাবের পক্ষে ১৪ ভোট পড়লেও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ায় তা বাতিল হয়।

ভোটের আগে নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য রাখেন ডেনমার্কের জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিনা মার্কাস ল্যাসেন। 

তিনি বলেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ এখন অনুমানকৃত বা ঘোষিত নয়, এটি নিশ্চিত। 

ইসরায়েল গাজা সিটিতে সামরিক অভিযান বাড়িয়ে দেওয়ায় বেসামরিক মানুষের দুর্ভোগ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ও মানবিক ব্যর্থতাই প্রস্তাব আনার পেছনের কারণ বলে জানান তিনি।

গত মাসে বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষক সংস্থা জানায়, গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ চলছে এবং তা আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি দপ্তর। 

আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্যের সম্মতিতে থাকা প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্র আবারও ভেটো দেওয়ায় আমরা দুঃখিত ও বিস্মিত।

তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অপরাধ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করছে এবং আন্তর্জাতিক আইনকে উপেক্ষা করতে প্ররোচিত করছে। 

আরও পড়ুন: জাতিসংঘে বিপুল ভোটে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রস্তাব পাস

ওয়াশিংটনকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাবটিতে স্পষ্টভাবে যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের আহ্বান ছিল।

প্রস্তাবে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে অভিযান বন্ধ করতে এবং গাজায় কোনো ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করতে বলা হয়।

এদিকে গাজার ভেতরে ইসরায়েলি সেনারা উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হয়ে গাজা নগরীর কেন্দ্রকে ঘিরে ফেলছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই কৌশলে বেসামরিক মানুষদের “স্যান্ডউইচ”-এর মতো মাঝখানে ফেলে পশ্চিম উপকূলীয় সড়কের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা জনবহুল এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নাদাভ শোশানি রয়টার্সকে জানান, পদাতিক, ট্যাংক, আর্টিলারি ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে কেন্দ্রের দিকে অভিযান চালানো হচ্ছে, যার লক্ষ্য হামাসকে কোণঠাসা করা।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হামলায় আতঙ্ক ও ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ আক্ষরিক অর্থে জীবন বাঁচাতে ছুটছে। আমরা ঢেউয়ের মতো মানুষের স্রোত দেখতে পাচ্ছি।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তর (ওসিএইচএ) সতর্ক করেছে, গাজা নগরীর শেষ জীবনরেখাও ভেঙে পড়ছে। ইসরায়েল পদ্ধতিগতভাবে ত্রাণ ঢোকার পথ বন্ধ করছে। বিশেষ করে জিকিম ক্রসিং বন্ধ থাকায় উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষপীড়িত জনগোষ্ঠীর কাছে সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। অনেক খাদ্যপণ্য প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনো প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষ—মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ—আটকা রয়েছেন। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন হামলা ও মৌলিক সেবার পতনে এই সংখ্যা দ্রুত কমতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।

চিকিৎসা সূত্র বলছে, শুধু বৃহস্পতিবারই গাজা নগরীতে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। নগরীর বাইরে অন্য এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একইদিনে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে ইসরায়েলি সেনাদের চারজন সদস্য নিহত হয়েছে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, ড্রোন ও যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালানোর পাশাপাশি সেনারা দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকভর্তি মানববিহীন যান ব্যবহার করছে, যা পুরো মহল্লা ধ্বংস করছে। ফলে অনেক পরিবার আবারও বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, যদিও পুরো গাজায় কোথাও “নিরাপদ অঞ্চল” নেই।

ফিলিস্তিনে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল বিমান হামলায় যোদ্ধা ও বেসামরিক মানুষের মধ্যে পার্থক্য করার আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতাকে উপেক্ষা করছে।

অন্যদিকে, জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান কমিশন মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার শামিল। অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি অভিযানে ইতিমধ্যেই ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং গোটা অঞ্চল ভয়াবহ খাদ্য সংকটে ভুগছে।

যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহ্যগতভাবে জাতিসংঘে ইসরায়েলকে রক্ষা করে আসছে। তবে বিরল এক পদক্ষেপে গত সপ্তাহে তারা নিরাপত্তা পরিষদের এক বিবৃতিকে সমর্থন দিয়েছিল, যেখানে কাতারে সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা করা হয়। কিন্তু এবার গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আটকে দিয়ে ওয়াশিংটন আবারও ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিল।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়