সকলের বাক-স্বাধীনতা স্বীকৃত হওয়া দরকার: শ্রেয়া সিঙ্ঘল
ইন্টারনেটে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় ভারতের সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পর ১২১ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশটিতে মাত্র চব্বিশ বছরের এক তরুণীর কথাই ঘুরে ফিরে আসছে। কারণ, আজকের বছর চব্বিশের শ্রেয়া সিঙ্ঘল তিন বছর আগে ২১ বছর বয়সে মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই মামলা করে বসেন।
জনস্বার্থে শ্রেয়া সিঙ্ঘলের দায়ের করা মামলাতেই গত মঙ্গলবার ইন্টারনেটে কথিত বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে ঐতিহাসিক রুল জারি করেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ এক আদেশে রুল জারি করে বলেন, সেকশন ৬৬-এ জনগণের মত প্রকাশের মৌলিক অধিকার খর্ব করে।
সর্বোচ্চ আদালতে মতপ্রকাশের পক্ষে এই ঐতিহাসিক রায়ের পরপরই ইন্টারনেটে সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটগুলোয় শুরু হয়ে যায় বাক-স্বাধীনতার জয় উদযাপন। স্বভাবতই খোঁজ পড়ে শ্রেয়ার। তার মুখেও তখন তৃপ্তির হাসি।
তিন বছর আগের কথা স্মরণ করে শ্রেয়ার মা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানালি সিঙ্ঘল জানান, সেদিন তার (শ্রেয়ার) মুখে হাসি ছিল না। ২০১২ সালের নভেম্বরের ওই দিনটিতে রাতের খাবার টেবিলে বসেই অনলাইনে মত প্রকাশ করায় মহারাষ্ট্রে দুই তরুণীকে গ্রেফতারের খবর পেয়ে শ্রেয়ার খুব মন খারাপ হয়ে যায়। খেতে বসেই এটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ‘শি ওয়াজ ভেরি আপসেট।’ কয়েক মাস আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতারের ঘটনাও শ্রেয়ার মনে দাগ ফেলে গিয়েছিল।
মানালি সিঙ্ঘল জানান, "শ্রেয়া বারবার বলছিল, এটা নিয়ে কি কিছু করা যায় না? আমি বলেছিলাম, করতে গেলে তোমাকেই এগিয়ে আসতে হবে।"
শ্রেয়া এগিয়ে এসেছিলেন। আর তার মা মানালিও ‘শ্রেয়া সিঙ্ঘল ভার্সাস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ লড়াইয়ে প্রথম থেকেই মেয়ের পাশে ছিলেন। একটা গোটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তিন বছর ধরে চলা সেই লড়াইটার ধকলও কম ছিল না। আর এই পুরো সময়টিতে মেয়ের পাশে থেকে সাহস দিয়ে গেছেন মানালি। আজ যখন শ্রেয়ার লড়াইকে সবাই কুর্নিশ জানাচ্ছে, তখন মায়েরও গর্বে বুক ফুলে উঠছে।
রায় প্রকাশের পর সাংবাদিকদের কাছে শ্রেয়া বলেন, “এই জয় কেবল তরুণ প্রজন্মের নয়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সকলের। এখন গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সব জায়গাতেই স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। যত দিন যাবে, তা আরও বাড়বে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে মতপ্রকাশের এই স্বাধীনতা দরকার ছিল।”
মামলা প্রসঙ্গে শ্রেয়া হাসতে হাসতেই জানান, “আমি যে সত্যিই সত্যিই এতটা করব, সেটা বোধ হয় প্রথমে কেউই ভাবেনি।”
তবে সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষত ফেসবুকের মাধ্যমে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার রাশ টেনে ধরতে সেকশন ৬৬ এর ভূমিকার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মা-মেয়ে দুজনেই দ্বিমত প্রকাশ করেন। তাঁদের মতে, “দেশের আইনে এই ধরনের অপরাধ রুখতে যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে।”
আইনের ছাত্রী শ্রেয়া জানান, “এটা কারও একার জয় নয়। ভারতের মতো বৈচিত্র্যে ভরা দেশে সকলের বাক-স্বাধীনতা স্বীকৃত হওয়া দরকার। তাই এই জয় সকলের।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসজে
নিউজবাংলাদেশ.কম








