News Bangladesh

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট থেকে || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
আপডেট: ১৭:৫৪, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

বিদ্যালয়ের কক্ষই প্রধান শিক্ষকের সংসার, খেলারমাঠ গোচারণ ভূমি

বিদ্যালয়ের কক্ষই প্রধান শিক্ষকের সংসার, খেলারমাঠ গোচারণ ভূমি

ছবি: নিউজবাংলাদেশ

বিদ্যালয়ের একটি কক্ষকে সরকারি অর্থে সংস্কার করে নিজের সংসার গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সহর উদ্দিন সরকার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলীর বিরুদ্ধে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটিতে অবাধে গবাদিপশুর বিচরণ করে বেড়ানোর কারণে খেলার মাঠটি পরিণত হয়েছে গোচারণ ভুমিতে।

জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে ১৯৪৬ সালে সহর উদ্দিন সরকার উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যা গত ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল জাতীয়করন করা হয়। প্রায় ৯ একর কৃষিজ ও কিছু বাণিজ্যিক স্থাপনা সম্পদের এ প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক আয় প্রায় অর্ধকোটি টাকার উপরে। গত ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর বিদ্যালয়টিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ইমরান আলী। এরপর প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম প্রধান গত বছরের সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসর গ্রহণ করলে সহকারী শিক্ষক ইমরান আলী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। 

সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির কৃষিজ ও বাণিজ্যিক জমি ভবন থেকে আদায় করা অর্থ সরকারি কোষাগাড়ে জমা না করে প্রতিষ্ঠানের বিএম শাখার (বেসরকারি) একটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা করে নিজের একক স্বাক্ষরে উত্তোলন করেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যয় পরিচালনা বিধির ২ এর ৪ এবং ৫ নং উপধারায় ৩ সদস্যের একটি অভ্যান্তরীন অডিট কমিটি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও এ প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত কোন কমিটি করা হয়নি। যার কারণে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী একক সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন বলে স্থানীয়দের দাবি। 

শুধু তাই নয়, ইমরান আলী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হলেও নিজে নিজেকে  ভারমুক্তি করে সরাসরি প্রধান শিক্ষক দাবি করছেন। প্রধান শিক্ষকদের অনার বোর্ডেও ভারপ্রাপ্ত শব্দটি লিখেননি তিনি। যা নিয়ে চলছে নানান সমালোচনা। 

বিদ্যালয়টির একটি পুরাতন ভবন সংস্কার করতে ঠিকাদার নিয়োগ করে গণপুর্ত অধিদপ্তর। সেই সংস্কার কাজে ঠিকাদারকে বাগিয়ে বিদ্যালয়ের একটি রুমে করেছেন নিজের আবাসন ব্যবস্থা। সেখানে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে রুমটি সাজিয়ে নিয়ে বসবাস করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী। সরকারি ভাবন বা আবাসনে বসবাস করলে বিধিমত বাড়িভাড়া কর্তন করার নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না।

একই সাথে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগও রয়েছে শিক্ষর্থী অভিভাবকদের। সম্প্রতি ১৬৭ জন শিক্ষার্থীর ৮ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি আদায়েও জন প্রতি প্রায় ৫৫ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পুরনের সময় জোরপুর্বক জনপ্রতি দুই হাজার টাকা কোচিং ফি আদায় করা হয়। 

আরও পড়ুন: খুলনায় বরাদ্দের নামে খাদ্য গুদাম আ.লীগ নেতার চাচার দখলে

সরেজমিনে রবিবার প্রতিষ্ঠানটিতে গেলে দেয়া যায়, বিশাল মাঠ মাড়িয়ে শ্রেণি কক্ষে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সেই মাঠে অবাদে বিচরণ করছে গরু ছাগল। বিদ্যালয়ের মাঠটি যেন গোচারণ ভুমিতে পরিণত হয়েছে। গবাদি পশুর বিষ্ঠার দুর্গন্ধে মাঠে খেলাধুলা তো দুরের কথা চলাচল করাও কষ্টকর। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা চলতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়ে নোংরা করছে পোশাক। বিদ্যালয়ের পুর্ব পকেট গেটের পাশেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্বঘোষিত বাসস্থান। 

ওই মাঠে চলাচল করা হাতীবান্ধা ২ নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ্যপ্রহরি আহেদ আলী বলেন, এ মাঠটি দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে আসছে। যার চার দিকে প্রাচির দেয়া থাকলেও দুইটি পকেট গেট দিয়ে এসব গরু ছাগল চারণ করেন স্থানীয়রা। এসব বন্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৯ম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী বলেন, গৌরবের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন কর্তৃপক্ষের দায়ত্বহীনতায় দিন দিন জৌলুস হারাচ্ছে। গরু ছাগল বিষ্ঠা মাড়িয়ে ক্লাশে যেতে হয়। গোবরের গন্ধে খেলাধুলা তো দুরের কথা চলাচলেও দুর্ভোগ পেতে হচ্ছে। দ্রুত অপসরনের দাবি জানায় এ শিক্ষার্থী। 

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক শাহি সোহাম্মদ আকতারুদোজা বলেন, প্রায় সময় কলিগদের কাছে শুনি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী ক্লাশ রুমে শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষকের সঙ্গে অশালিন আচরণ করেন। তার অশালিন আচরণ থেকে মুক্তি পাননি নারী শিক্ষকও। যদিও আমার সাথে কখনও এমনটা করেননি। 

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান হয়ে নিজেকে ভারমুক্ত পরিচয় দিচ্ছেন ইমরান আলী। অভ্যন্তরীন অডিট কমিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যায় নিরীক্ষণের ব্যবস্থার কখা বললেও তিনি কর্নপাত করেন না। পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র ফি পর্যন্ত আত্নসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের কোন হিসাব কাউকে দেন না। বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ তিনি দখল করে বসবাস করছেন।

বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী বলেন, দুর থেকে এসেছি, একটি রুম মুসাফির হিসেবে ব্যবহার করতেই পারি! এটা কোন অপরাধ নয়। আবাসিক নয়, বাড়ি ভাড়া কেন কর্তন হবে। আর আয় ব্যায়ের জন্য অভ্যান্তরীন অডিট কমিটি আগামী ডিসেম্বরে গঠন করা হবে। মন্ত্রণালয় কোন কোড বা নির্দেশনা না দেয়ায় প্রতিষ্ঠানের আয় একটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা করা হচ্ছে। তবে হিসাব নম্বর জানতে চাইলে তিনি দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি। একটি টাকাও আত্নসাৎ করার ইচ্ছে আমার নেই।

মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক রোকসানা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের রুমে বসবাস করার সুযোগ নেই। আমি নতুন যোগদান করেছি তাই বিষয়গুলো জানা নেই। তবে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়