খুলনায় বরাদ্দের নামে খাদ্য গুদাম আ.লীগ নেতার চাচার দখলে

ছবি: নিউজবাংলাদেশ
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুর বাজারের পাশের সরকারি খাদ্য গুদামটি অভিভাবক শূন্য হযে পড়েছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দলটির এক প্রভাবশালী নেতার ভাই ক্ষমতার দাপটে গুদামটি নিজের অনুকুলে বরাদ্দ নেন। সরকারি দুই দপ্তরের টানাটানিতে খাদ্যগুদামটি হয়ে পড়ে অভিববকহীন।
এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যগুদামের দেয়াল ঘেষে ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমির উপরে তোলা হয়েছে ঘর। যদিও ঘর নির্মাণকারী ব্যক্তি বলেছেন, তিনি কেনা জমিতে ঘর নির্মাণ করছেন।
এদিকে অবৈধভাবে নির্মিত ঘরটি উচ্ছেদের জন্য শাহপুর বাজার বণিক সমিতি ও ইউনিয়ন পরিষদের জেচয়ারশ্যান উপজেলা নির্বাহি অফিসার বরাবর আবেদন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, স্থানীয় সরকার বিভাগ স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুর বাজার/ হাটের পাশে ২৫০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি খাদ্য গুদাম নির্মাণ করে। শুরুতে এ গুদামে নির্ধারিত ভাড়ায় খাদ্য ব্যবসায়ীরা ধান, চাল রাখতেন। পরবর্তিতে ২০০৩ সালে আন্দুলিয়া গ্রামের এস এম শফিকুল ইসলাম স্থানীয় সরকার বিভাগ ( এলজিইডি) থেকে ভাড়া নেন। তিনি ২০১৭ সাল পর্যন্ত গুদামটি নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করেন।
পরে ২০১৭ সালে ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের জেলা নেতা গাজী এজাজ আহমেদ তার আপন চাচা গাজী আবুল কালাম আজাদের মেসার্স আজাদ ট্রের্ডাসের অনুকূলে এটি বরাদ্দ দেন। তিনি ২০১৭ সাল থেকে বরাদ্দ নিয়ে ব্যবহার করছেন। সবশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ২৩ হাজার ৭৫০ টাকা পে অর্ডারের মাধ্যমে এলজিইডির খুলনার নির্বাহি প্রকৌশলী কাছে পরিশোধ করেন। এরপর গত ২ অর্থবছরে আর কোন অর্থ তিনি জমা দেননি।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে বীর নিবাসের কাজে দুর্নীতি, ঘর বুঝে না পেয়ে হতাশা
এদিকে হঠাৎ করে আবুল কালাম আজাদের ভাইপো ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের চাচাত ভাই মোঃ আশরাফুল ইসলাম গাজী খাদ্য গুদামটির দেয়াল ঘেষে একটি ঘর তৈরি করে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করছেন। ওই ঘরটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের শাহপুর- ফুলতলা সড়কের পাশে নির্মাণ করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।
এ বিষয়ে মোঃ আশরাফুল ইসলাম গাজী বলেন, তিনি জনৈক সওকাতের নিকট থেকে ২০০৯ সালে গুদামের পাশে ১ শতক জমি কিনেছেন। সেই জমি মাস ছয়েক আগে নামজারি করে খাজনাও পরিশোধ করেছেন।
এ বিষয়ে শাহপুর বাজার বণিক সমিতির আহবায়ক একএম জাফর ইকবাল বলেন, ক্ষমতার দাপটে সরকারি এই খাদ্যগুদামটি আওয়ামী লীগ নেতার চাচা বরাদ্দের নামে দখল নেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার না থাকলেও তাদের দাপট এখনও বহাল রয়েছে। সেই দাপটের অংশ হিসেবে সরকারি জমিতে ঘর নির্মাণ করেছে। শুনেছি ওই জমি নাকি তিনি কিনে নামজারি করেছেন। সরকারি জমি কিভাবে ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হলো আমরা বুঝতে পারছি না।
ডুমুরিয়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোঃ দারুল হুদা বলেন, শাহপুর সরকারি খাদ্যগুদামটি গাজী আবুল কালাম বরাদ্দ নিয়েছেন। তিনি ২০২২-২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারি রাজস্বও প্রদান করেছেন। পরবর্তিতে কৃষি বিভাগের একটি চিঠির নির্দেশনার কারণে ভাড়া নেয়া বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, গুদামের দেয়াল ঘেষে ঘর নির্মাণের বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন জানান, সরকারি জমিতে ঘর নির্মাণের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। সরকারি জমি উদ্ধার করতে জমি মাপ দিয়ে আলাদা করা হবে। তাছাড়া সরকারি জমিতে অবৈধ স্থপনা বা ঘর নির্মাণ করা হলে সেটি উচ্ছেদ করা হবে বলে জানান তিনি। ৃ
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি