জেড আই খান পান্নাকে জরুরি ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনালে তলব
ছবি: সংগৃহীত
টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) গুম করে রাখার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে জরুরি ভিত্তিতে তলব করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের শুনানির সময় ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
চার্জ গঠনের শুনানির শুরুতে আদালত জানতে চান, রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাহেব কোথায়?
জবাবে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, তিনি এ মামলা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছেন।
আদালত বলেন, তিনি কী কোর্টে এসে বলেছেন? তিনি কী আইন জানেন না? নিয়োগ দিয়েছেন কোর্ট, তাকে কোর্টে এসে বলতে হবে তিনি প্রত্যাহার করতে চান।
এ সময় চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমরা অভিযোগ গঠনের শুনানি করতে চাই। পরে আদালত, রেজিস্ট্রারকে বলেন, তাকে ফোন করে এখনি আসতে বলেন, অথবা একজন গিয়ে তাকে এখনি নিয়ে আসেন, তাকে এখনি আসতে হবে।
মামলায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে—তাদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ মোট ১৭ জন। এদের মধ্যে সাতজনকে পলাতক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, আর বাকি ১০ জন সেনা সদস্য বর্তমানে গ্রেপ্তার অবস্থায় আছেন। তারা বিভিন্ন সময়ে র্যাবের সঙ্গে কর্মরত ছিলেন বলে মামলার নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
আগামী নির্বাচন নিয়ে জাতি গর্ব করবে: প্রধান উপদেষ্টা
এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা ১০ সেনা কর্মকর্তা হলেন—কর্নেল এ কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম, খুনের মামলায় গত ২২ অক্টোবর অন্য মামলার তিন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে এই ১০ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
শুনানিকে ঘিরে গ্রেপ্তার ১০ সেনা সদস্যকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার বিষয়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুমের একটি অভিযোগের (টিএফআই) ঘটনায় আসামি শেখ হাসিনা ও তারেক সিদ্দিকীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।
অন্যটিতে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) গুমের ঘটনায় আসামি শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এই ৩০ জনের মধ্যে শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকী দুটি মামলাতেই আসামি। ফলে আসামি সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮ জনে। এদের মধ্যে ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, বাকিরা পলাতক।
এ ছাড়া জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) আটক রেখে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের হওয়া আরেকটি মামলায় ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী রোববার ধার্য রয়েছে।
এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর গত ১১ অক্টোবর সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়—তাদের ১৫ কর্মরত কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় তার পক্ষে আদালতে লড়বেন না।
এই ঘোষণার পেছনে আদালতের প্রতি শেখ হাসিনার আস্থাহীনতাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে পান্না বলেন, ‘যে আদালতের ওপর শেখ হাসিনার আস্থা নেই, সেই আদালতে আমি তার পক্ষে লড়াই করব না। আমি এই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানালাম।’
জেড আই খান পান্না আরও জানান, রাষ্ট্র তাকে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিলেও তিনি এখনও সেই সংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাননি। চিঠি হাতে পেলেই তিনি আনুষ্ঠানিক উপায়ে পদত্যাগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি








