News Bangladesh

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:০২, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

হাওর ও নদীর মাছ বাজারে উঠতেই উধাও 

হাওর ও নদীর মাছ বাজারে উঠতেই উধাও 

ছবি: নিউজবাংলাদেশ

শীতের সকালটা তখনো মৃদু লালচে আলোয় রঙিন। সারারাত যারা হাওর-নদীতে মাছ ধরেছেন, তারা এখন হাতে নানান আকারের খলুই ঝুলিয়ে বা কাঁধে মাছের ভার নিয়ে হাটের দিকে ছুটে চলেছেন। সকালের এই রঙিন আলো যেমন দ্রুত বদলায়, হাটও চোঁখের পলকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে ফেরাতেই মুহূর্তের মধ্যে ফুরিয়ে যায়।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের কাউয়াদীঘি ও কুশিয়ারা নদীর তীরে হাওর-নদীর মাছ নিয়ে শীতের সকালবেলায় দুই ঘণ্টার হাট বসে। ওয়াপদা-কাশিমপুর হাটের বয়স প্রায় অর্ধশত বছরে, তবে প্রতিদিন সকালবেলা মাছের এই হাট বসছে ২০ থেকে ২২ বছর ধরে।

প্রতিদিন সকালে লাখ টাকার মাছ কেনাবেচা হয় এই হাঁটর বরাতে। এখানে শুধু কাউয়াদীঘি হাওর ও কুশিয়ারা নদীর মাছই বেশিরভাগ পাওয়া যায়। হাওর-নদীর মাছ হওয়ায় হাটের অন্য রকম আলাদা কদর রয়েছে। মৌলভীবাজারের শহরসহ দুরের অনেক ক্রেতাই ছুটে চলে আসে ভোরবেলায় এখানে মাছ কিনতে।

বঙ্গোপসাগরে মাছের মজুত ১,৫৮,১০০ টন থেকে কমে ৩৩,৮১১ টন

শিশির ভেজা ভেজা মাথার চুল গুলো ভেজা শীতে সকাল ছয়টার দিকে হাটে পৌঁছে দেখা গেল, বাজার তখন অনেকটাই জমে গেছে। হাটের দুই পাশ থেকে কেউ হাতে মাছের খলুই ঝুলিয়ে, কেউ কাঁধে মাছের ডালা নিয়ে দ্রুত হাটের দিকে আসছেন। আগে এলে আগে বিক্রি করার সুযোগ, তাই তাদের তাড়া।

বাজারে ঢুকেই হাটের দুটি আড়তের যেকোনো একটিতে মাছ নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিক্রেতারা। নিলামে ডাক ওঠার পর ক্রেতারা গোল হয়ে অংশ নেন। নিলামে সবচেয়ে বেশি দাম বললেই মাছটি ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিক্রেতারা টাকা গুনে অন্য কিছু কেনাকাটা করছেন বা বাড়ির পথে চলেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার এই মিলন মেলায় হাট জমজমাট হয়ে ওঠে।

এখানে নিজেদের বাসা বাড়িতে খাওয়ার জন্য মাছ কিনতে আসা ক্রেতা আছেন। তবে বড় অংশ খুচরা বিক্রেতা। তারা এখানে মাছ ক্রয় করে মৌলভীবাজার জেলা শহরসহ বিভিন্ন গ্রামীণ হাটে ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন অথবা গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন। মাছের মধ্যে আছে কই, টাকি, পুঁটি, মলা, কাকিলা, বোয়াল, গ্রাস কার্প, কার্প, রুই, চিংড়ি, চাঁদা, স্থানীয় পুঁটি মাছসহ আরও বেশ কিছু দেশীয় প্রজাতির মাছ।

মাছের সঙ্গে অন্যান্য পণ্যেরও বেচাকেনা হয়। কেউ গৃহ পালিত হাঁস-মোরগ নিয়ে এসেছেন। লাইন ধরে হাঁস-মোরগ বিক্রি করছেন অনেকে। রয়েছে সবজির দোকান, পান-সিগারেটের ভ্রাম্যমাণ দোকান। হাটের চা-স্টলে চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছে, প্লেটে তুলে বিক্রি হচ্ছে পরোটা ও আখনি।

স্থানীয় বাসিন্দা আশিক মিয়া বলেন, ‘এই বাজারে সব হাউরিয়া (হাওরের) মাছ। কাউয়াদীঘি হাউরিয়া আর কুশিয়ারা নদীর মাছ ছাড়া অন্য কোথাও থেকে মাছ আসে না। এখানে একটাও চাষর(ফিসারিজ) মাছ নাই।’

সকাল ছয়টা থেকে হাট শুরু হয়, আটটার মধ্যেই মাছের কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়। তবে বন্ধের দিন শুক্রবারে মানুষ অন্যদিনের তুলনায় বেশি আসেন। আশির দশকের শুরুতে হাওর কাউয়াদীঘিকে ঘিরে মনু নদ সেচ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তার পর হাটটি গড়ে ওঠে। আগে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে বিক্রির জন্য সরাসরি অন্যান্য হাঁটে যেতেন। এখন অল্প কিছু মাছ নিয়ে দূরে যেতে হয় না। প্রতিদিন সকালবেলায় এই হাঁটেই এসে মাছ বিক্রি করেন।

হাটের একজন আড়তদার আকলু মিয়া বলেন, হাটের দুই আড়তে প্রতিদিন সকালে লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। তবে সব মাছ এখানে আসে না, আড়তের বাইরেও অনেক মাছ বিক্রি হয় ‍ৃ

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়