বঙ্গোপসাগরে মাছের মজুত ১,৫৮,১০০ টন থেকে কমে ৩৩,৮১১ টন
ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গোপসাগরে ২০১৮ সালে যেখানে ছোট উপরিস্তরবাসী (পেলাজিক) মাছের মজুত ছিল এক লাখ ৫৮ হাজার ১০০ টন, ২০২৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৩ হাজার ৮১১ টনে। এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত অনুষ্ঠানে জরিপ প্রতিবেদনটির একটি অংশ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মৎস্য অধিদপ্তর এবং এফএও'র যৌথ উদ্যোগে জরিপটি করা হয়।
এদিকে ২০১৯ সালে যখন সর্বশেষ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয় তখন দেখা গিয়েছিল, অতিরিক্ত আহরণের কারণে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ চাপে রয়েছে। বেশ কিছু প্রজাতি মারাত্মকভাবে কমে গেছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রজাতির মধ্যে ছিল টাইগার চিংড়ি, ভারতীয় স্যামন ও বড় আকারের ক্রোকার মাছ, বলা হয়েছিল ওই জরিপ প্রতিবেদনে।
সাম্প্রতিক জরিপে অংশ নেওয়া মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল-মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে গতকাল বলেন, বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত মাছ শিকার।
এদিকে নতুন জরিপে দেশের সমুদ্রসীমায় নতুন আরও ৬৫ প্রজাতির মাছের সন্ধান পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৫ প্রজাতির মাছ সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম দেখা গেছে। এত দিন সাগরে মোট ৪৭৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত।
তিনি জানান, ১৯৮৫ সালে যেখানে প্রায় ১০০টির কম বাণিজ্যিক ট্রলার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার জন্য যেত সেই সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৩টিতে। পরিস্থিতি আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য এখানে নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
তিনি আরও বলেন, জরিপে দেখা গিয়েছে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছের সংখ্যা এবং আকার দুটোই দ্রুত কমছে। যা খুবই উদ্বেগজনক। বাস্তুতন্ত্রের ব্যাঘাত এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ও মাছ কমে যাওয়ার কারণ বলে মনে করেন তিনি।
এফএওর সহায়তায় ৮টি দেশের ২৪ জন বিজ্ঞানীর মাধ্যমে মাসব্যাপী এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। জাতিসংঘের একটি গবেষণা জাহাজ এ বছরের ২১ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালনা করে।
জরিপে বঙ্গোপসাগরের ৬৮টি স্টেশন থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, বলা হয়েছে ওই জরিপ প্রতিবেদনে। বাংলাদেশের এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে জরিপটি পরিচালিত হয়।
জরিপে সমুদ্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত পরিমাপ, মাছ শিকারের ট্রলিং, প্ল্যাঙ্কটন ও জেলিফিশ এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক সংগ্রহ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই জরিপ ইএএফ-নানসেন প্রোগ্রামের অংশ।
গবেষণা জাহাজ ড. ফ্রিডটজফ নানসেন ব্যবহার করে এফএও ও নরওয়ের সহায়তায় এটি সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: গণমানুষের নেতা ‘লাল মওলানা’
আব্দুল্লাহ আল-মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে আরও বলেন, নতুন শনাক্ত হওয়া এসব মাছের পূর্ব ইতিহাস এবং গোত্র নির্ধারণের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
আবার প্রথমবারের মতো দেশের সমুদ্রসীমায় টুনা মাছের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে জরিপের সময়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছ, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ১৫ প্রজাতির অধিক কাঁকড়া, ৫ প্রজাতির কচ্ছপ, ১৩ প্রজাতির প্রবাল রয়েছে।
এদিকে জরিপের সময় আরও দেখা গেছে, আগে গভীর সমুদ্রে বেশি পাওয়া যাওয়া জেলিফিশ এখন উপকূলে অনেক বেশি সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদনের সঙ্গে যদি বর্তমানটির তুলনা করা হয় পরিস্থিতি ভয়াবহ।
জরিপ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে স্কিপজ্যাক টুনা এবং অন্যান্য টুনা প্রজাতির উপস্থিতি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্কিপজ্যাক টুনা ট্রলার এবং হুক-এন্ড-লাইন ব্যবহার করে ধরা হয়েছে, এবং গবেষকরা এক্সক্লুসিভ জোনের অভ্যন্তরে টুনার ঝাঁকও পর্যবেক্ষণ করেছেন।
স্কিপজ্যাক টুনা একটি ছোট, পরিযায়ী প্রজাতি, যা সমগ্র উষ্ণমণ্ডল ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় সাগরে পাওয়া যায়। এরা সর্বাধিক প্রাচুর্যযুক্ত বাণিজ্যিক টুনা হিসাবে পরিচিত।
দেশের ২০টি প্রধান মাছের মধ্যে ২০১৮ সালে নয়টি প্রজাতি বাণিজ্যিকভাবে আহরণযোগ্য ছিল, তবে নতুন জরিপ অনুযায়ী এখন তা কমে মাত্র পাঁচটিতে দাঁড়িয়েছে।
জরিপের সময় গবেষকরা ৩৪টি স্থানে সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা, তাপমাত্রা ও গভীরতা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেন। তারা পিএইচ, ক্ষারত্ব ও পুষ্টি উপাদান বিশ্লেষণের জন্য ২৭৫টি নমুনা সংগ্রহ করেন।
৩২টি স্থান থেকে প্ল্যাঙ্কটন নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যারা মধ্যে টুনাসহ ৯,৭৯৪টি মাছের লার্ভাও ছিল। এতে ৪১৮টি মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, অতিরিক্ত মাছ শিকার, অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত শিকার এবং ক্ষতিকর জাল ব্যবহারের কারণে সামুদ্রিক মাছের মজুত কমছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি








