News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ভারতে বেওয়ারিশ কুকুরের পাহারায় নবজাতকের জীবনরক্ষা

ভারতে বেওয়ারিশ কুকুরের পাহারায় নবজাতকের জীবনরক্ষা

ছবি: সংগৃহীত

নদীয়া জেলার নবদ্বীপ শহরে রেলওয়ে কর্মী কলোনির কাছে একটি বাথরুমের বাইরে ঠান্ডা মাটিতে প্রায় সদ্যজাত এক শিশুকন্যাকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটির বয়স আনুমানিক কয়েক ঘণ্টা। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সারারাত ধরে কয়েকটি বেওয়ারিশ কুকুর শিশুটিকে ঘিরে একটি বৃত্ত তৈরি করে নীরব প্রহরীর মতো রক্ষা করছিল। 

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এবং চাইল্ড হেল্প কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে।

শীতের রাতের শেষ প্রহরে, ভোরের ঠিক আগে কলোনির আশপাশের বাসিন্দারা ক্ষীণ কান্নার শব্দ শুনতে পান। বাইরে বেরিয়ে তারা দেখতে পান। কলোনির বাথরুমের বাইরের মাটিতে একটি সদ্যজাত শিশুকন্যা পড়ে আছে। শিশুটির শরীরে তখনও জন্মের রক্ত লেগে ছিল এবং উপরে কোনো আচ্ছাদন ছিল না।

তবে সবচেয়ে লক্ষণীয় ছিল শিশুটির চারপাশে কয়েকটি ভবঘুরে কুকুরের অবস্থান। 

স্থানীয়রা জানান, কুকুরগুলো আক্রমণাত্মক ছিল না, বরং সতর্ক অবস্থায় শিশুটিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল এবং সারারাত কাউকে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। 

স্থানীয় বাসিন্দা শুক্লা মণ্ডল প্রথমে শিশুটির কাছে এগিয়ে গেলে কুকুরগুলো নীরবে সরে যায়।

শুক্লা মণ্ডল নিজের ওড়না দিয়ে শিশুটিকে জড়িয়ে ধরেন এবং দ্রুত প্রতিবেশীদের সাহায্যে তাকে উদ্ধার করে। স্থানীয়রা প্রথমে মহেশগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন: আট কুকুরছানা হত্যায় গ্রেফতার নিশি খাতুন

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শিশুটির শরীরে কোনো বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন নেই এবং সে বর্তমানে স্থিতিশীল ও সুস্থ অবস্থায় আছে। 

ডাক্তারদের ধারণা, জন্মের কয়েক মিনিটের মধ্যেই রাতের অন্ধকারে কেউ শিশুটিকে কলোনির কাছে ফেলে রেখে যায়।

নবদ্বীপ থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং চাইল্ড হেল্প কমিটিকে অবহিত করে শিশুটির দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পুলিশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে এবং শিশুটির পরিচয় ও পরিবার খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, কলোনি এলাকার কেউ এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

এই ঘটনাটি শহরবাসীর মধ্যে গভীর ছাপ ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা কুকুরগুলোর অস্বাভাবিক মানবিক আচরণের প্রশংসা করছেন। 

একজন রেলকর্মী বলেন, যে মানুষ এই শিশুকে ফেলে গেছে, তার চেয়ে ঢের বেশি মানবতা দেখিয়েছে এই অবহেলিত কুকুরগুলো।

ইতিমধ্যে, ছত্তীসগড়ের মুঙ্গেলী জেলাতেও একই ধরনের একটি খবর সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে একটি মা কুকুর পরিত্যক্ত মানবশিশুকে সারারাত ধরে তার নিজের ছানাদের পাশে রেখে পাহারা দিয়েছিল।

পুলিশ ও সমাজকল্যাণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিশুটিকে চাইল্ডলাইনের হাতে তুলে দেওয়া হবে এবং তার পরবর্তী যত্নের ব্যবস্থা করা হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনকে কলোনির আশপাশে নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়