ট্রাম্পের আলটিমেটাম নাকচ করে পাল্টা শর্ত মাদুরোর
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা ত্যাগের জন্য সরাসরি আলটিমেটাম দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মায়ামি হেরাল্ড জানায়, ট্রাম্প ফোনালাপে মাদুরোকে জানিয়েছেন, তিনি ও তার ঘনিষ্ঠরা দেশ নিরাপদে ছাড়তে পারবেন, তবে শর্ত হলো অবিলম্বে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো।
তবে মাদুরো এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি তার জন্য এবং ঘনিষ্ঠদের জন্য বিশ্বব্যাপী আইনি দায়মুক্তি বা ‘গ্লোবাল অ্যামনেস্টি’ দাবি করেছেন। এছাড়া তিনি চেয়েছেন, সরকার ছাড়লেও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ তার হাতে রাখতে হবে। ট্রাম্প ও মাদুরোর মধ্যে ফোনালাপের বিস্তারিত কোনও পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এটি হয়েছে ২১ নভেম্বর এবং ব্রাজিল, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হুমকি বাস্তব রূপ নেবে—এমন কোনও আশঙ্কা মাদুরো প্রশাসনের মধ্যে নেই। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, মাদুরো সরকারের ঘনিষ্ঠরা মার্কিন হুমকিকে ‘ব্লাফ’ হিসেবেই দেখছেন।
২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা মাদুরো একের পর এক সংকট মোকাবিলা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা, গণবিক্ষোভ, ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ, একবার হত্যাচেষ্টা, এবং বিতর্কিত নির্বাচন—যেখানে তিনি পরাজিত হয়েছেন বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র–ভেনেজুয়েলার সম্পর্ক মূলত তেল, রাজনীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে জটিল। ভেনেজুয়েলায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল মজুদ রয়েছে—৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব মজুদ ৫৫ বিলিয়ন ব্যারেল। এই বিশাল তেল মজুদের কারণে বহু বিশ্লেষক ভেনেজুয়েলাকে মার্কিন জাতীয় স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখেন।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে। বিশেষ করে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকায় হামলা চালানো হয়েছে, বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করা হয়েছে, এবং গোপন সিআইএ অভিযান অনুমোদিত হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগ এনেছে, যা মাদুরো অস্বীকার করেছেন।
তবে ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যেও মাদুরো অনড়। ৩০ নভেম্বর ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার পুরো আকাশসীমা ‘সম্পূর্ণ বন্ধ’ ঘোষণা করলে কারাকাস তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে। ভেনেজুয়েলার সরকার ঘোষণা করেছে, তারা কোনো বিদেশি নির্দেশ মেনে নেবে না।
মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযোগ করেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল মজুদ দখল করতে তারা সামরিক শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করছে। বিপরীতে, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ভেনেজুয়েলার সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র–ভেনেজুয়েলার এই উত্তেজনা আন্তর্জাতিক তেল বাজার এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে। মাদুরোর প্রতি ট্রাম্পের চাপ, সম্ভাব্য সামরিক হুমকি এবং বৈশ্বিক মধ্যস্থতায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টা—সব মিলিয়ে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি এখন অনিশ্চিত।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








