বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান
ফাইল ছবি
দীর্ঘদিন ধরে লোকসান, খেলাপি ঋণ ও অনিয়মে জর্জরিত দেশের নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাতের স্থিতিশীলতা ফেরাতে বড়ো পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর আওতায় ৯টি দুর্বল এনবিএফআইকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করার অনুমোদন দিয়েছে।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
গভর্নর বলেন, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সরকার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার জন্য মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে।
এই ৯টি প্রতিষ্ঠান হলো ফাস্ট ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আবিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানগুলো এনবিএফআই খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৫২ শতাংশের দায় বহন করছে। ২০২৪ সালের শেষের হিসাবে খাতের মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। আটটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৯৫ টাকা, অর্থাৎ সম্পদ বিক্রি করেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো অবশিষ্ট থাকবে না।
এই ৯ প্রতিষ্ঠানে মোট আটকে থাকা আমানত ১৫,৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তিগত আমানত ৩,৫২৫ কোটি এবং ব্যাংক ও করপোরেট আমানত ১১,৮৪৫ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: ‘বাংলাদেশ নিয়ে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে একটি চক্র’
ব্যক্তিগত আমানতের মধ্যে সর্বোচ্চ আটকে আছে পিপলস লিজিং ১,৪০৫ কোটি টাকা, আবিভা ফাইন্যান্স ৮০৯ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৬৪৫ কোটি টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ৩২৮ কোটি টাকা, ফাস্ট ফাইন্যান্স ১০৫ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা, লিকুইডেটর নিয়োগ, সম্পদ বিক্রি এবং প্রাপ্ত অর্থ দাবিদারদের মধ্যে বণ্টনের প্রক্রিয়া শুরু করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এনবিএফআই খাতের দুরবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে দুর্বল শাসনব্যবস্থা, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণ, জমে থাকা ঋণ পুনরুদ্ধারে ব্যর্থতা ও কৃত্রিম হিসাব তৈরির কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
২০২৫ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস বিভাগ ২০টি দুর্বল এনবিএফআইকে ‘রেড ক্যাটাগরিতে’ চিহ্নিত করে। এখান থেকেই এই ৯টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়। বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন বা টিকে থাকার পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে।
সেগুলো হলো সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়ো ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণের উদাহরণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একীভূতকরণ ও এনবিএফআই-এর অবসায়ন—দুই পদক্ষেপই স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের জন্য আর প্রশ্রয় থাকবে না।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








