News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আইয়ুব মিয়া

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আইয়ুব মিয়া

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের আর্থিক সংকট, অনিয়ম ও শেয়ারদামে ধসের মধ্য দিয়ে টিকে থাকার লড়াই করা পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে গঠিত রাষ্ট্র-মালিকানাধীন ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। নতুন এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ও অভিজ্ঞ প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আয়ুব মিয়া। 

সোমবার (১ ডিসেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদের ৩০ নভেম্বরের সভায় চূড়ান্ত লাইসেন্স অনুমোদনের পর ব্যাংকটি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করছে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক—এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করেই নতুন ব্যাংকটি গঠিত হয়েছে। বহুবার তারল্য সহায়তা দেওয়ার পরও এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হয়ে বরং আরও নাজুক হয়ে পড়ায় এবং শেয়ারবাজারে মূলধন ক্ষয়ের কারণে নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন নীতিমালার আওতায় একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। দেশব্যাপী ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে আসছে, তার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হিসেবে এই একত্রীকরণকে দেখা হচ্ছে।

নতুন ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে পূর্ববর্তী ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের শেয়ার থেকে। অনুমোদিত মূলধন রাখা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। মূলধনের ভিত্তিতে এটি এখন দেশের সবচেয়ে বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক। 

আরও পড়ুন: বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আমানতকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘ডিপোজিট সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুযায়ী দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত দ্রুত ফেরত দেওয়া হবে এবং এর বেশি আমানতের পরিশোধ পরিকল্পনাও শিগগিরই জানানো হবে।

ব্যাংকটির যাত্রা শুরুর প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ৯ নভেম্বর, যখন বাংলাদেশ ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার জন্য অনাপত্তিপত্র এবং লেটার অব ইনটেন্ট জারি করে। এর আগে পাঁচ নভেম্বর পাঁচ ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ৩০ নভেম্বর লাইসেন্স অনুমোদনের মধ্য দিয়ে একীভূতকরণ সম্পন্ন হয় এবং চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান ড. মোহাম্মদ আয়ুব মিয়া।

ড. আয়ুব মিয়া দেশের প্রশাসন, অর্থনৈতিক নীতি, ইসলামিক ফাইন্যান্স, করপোরেট গভর্ন্যান্স, যাকাত ব্যবস্থাপনা ও দরিদ্র বিমোচন কৌশলে সুপ্রতিষ্ঠিত নাম। তিনি ৩০ বছরের প্রশাসনিক কর্মজীবনে খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের ১৫টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর গত ১২ বছর তিনি সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করেছেন। পাশাপাশি ইউনিলিভার, রেকিট অ্যান্ড বেঙ্কিজার, শিল্প ব্যাংক, বিএসসিআইসি ও স্টিল মিল করপোরেশনের বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সুইজারল্যান্ড, চীন ও সিঙ্গাপুরে উচ্চ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং আইএলও ও ডব্লিউআইপিও-এর আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও অংশ নিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নতুন ব্যাংকটি নিবিড় তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে এবং খুব দ্রুতই একটি আধুনিক, দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এই একীভূতকরণ দেশের ব্যাংকিং খাতকে পুনর্গঠন, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও জনগণের আস্থা পুনর্নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়