নভেম্বরে রেমিট্যান্সে নতুন মাইলফলক: আয় ২.৮৯ বিলিয়ন ডলার
ফাইল ছবি
চলতি বছরের নভেম্বর বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে দেশে এসেছে ২.৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১.৩৭ শতাংশ, যা প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতির জন্য উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক অগ্রগতি।
নভেম্বর মাসে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স চলতি বছরের তৃতীয় সর্বোচ্চ মাসিক আয়। এর আগে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছিল মার্চে ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসে মে মাসে, ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার।
সোমবার (০১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, নভেম্বর মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আসে ২৯ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে সর্বোচ্চ ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বিদেশি খাতের ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে বাকি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
মাসজুড়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ধারাবাহিক। ২৩–৩০ নভেম্বর সময়ে দেশে আসে ৭৫ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার। ১৬–২২ নভেম্বর প্রবাসীরা পাঠান ৬১ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ৯–১৫ নভেম্বর সময়ে আসে ৭৬ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার, আর ২–৮ নভেম্বর আসে ৭১ কোটি ১০ লাখ ৭০ হাজার ডলার। শুধু নভেম্বরের প্রথম দিনেই দেশে এসেছে ৪ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
এভাবে গড়ে প্রতিদিন দেশে এসেছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। প্রবাসী আয়ের এই প্রবাহ চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মাসিক রেমিট্যান্স, যা অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
আরও পড়ুন: সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আইয়ুব মিয়া
এর আগে, গত অক্টোবর মাসে দেশে আসে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে আসে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আগস্টে প্রাপ্ত আয় ছিল ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার, আর জুলাইয়ে আসে ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ধারাবাহিক এই বৃদ্ধি প্রবাসী আয়ের ওপর সরকারের মনোযোগ ও নীতিগত প্রণোদনার ইতিবাচক প্রভাবই তুলে ধরছে।
গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ৩০.৩২ বিলিয়ন ডলার—যা দেশের ইতিহাসে যেকোনো অর্থবছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। চলতি বছরের প্রবণতা বলছে, নতুন রেকর্ড তৈরির সম্ভাবনাও রয়েছে সামনে।
এদিকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.২০ বিলিয়ন ডলারে। যা আগের দিনের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি। ৩০ নভেম্বর গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১.১৪ বিলিয়ন ডলার এবং ২৪ নভেম্বর ছিল ৩১.০৮ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম–৬ পদ্ধতি অনুযায়ী দেশের নিট রিজার্ভ এখন ২৬.৫১ বিলিয়ন ডলার। এর আগের দিন এই পরিমাণ ছিল ২৬.৪২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ পদ্ধতিতে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক দায় বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভ নির্ধারণ করা হয়।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈধ চ্যানেলে প্রণোদনা বৃদ্ধি, হুন্ডি প্রতিরোধে নজরদারি, এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রধান শ্রমবাজারগুলোর স্থিতিশীলতা রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, রেমিট্যান্স এবং রিজার্ভ—দুটি ক্ষেত্রেই আগামী মাসগুলোতে আরও ইতিবাচক চিত্র দেখা যেতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








