নোয়াখালীতে বীর নিবাসের কাজে দুর্নীতি, ঘর বুঝে না পেয়ে হতাশা

ছবি: নিউজবাংলাদেশ
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিতব্য বীর নিবাসের কাজে ধীরগতি ও দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে হস্তান্তরের আগেই বেশিরভাগ ঘরে দেখা দিয়েছে নির্মাণ ত্রুটি, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, ইতোমধ্যে শতাধিক ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অচিরেই বাকি ঘরগুলোর কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২০২১ সালে ১৮৬টি বীর নিবাস বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। বরাদ্দকৃত ১৮৬টি ঘরের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ১ আগস্ট।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঘরগুলোর কাজ শুরু হওয়ার তিন বছর শেষ হয়ে গেলেও এখনো ঘর বুঝে পায়নি বেশিরভাগ উপকারভোগীরা। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে ঘরগুলো হস্তান্তরের আগেই দেয়ালে ফাটল, ছাদে পানি চুয়ানো, পলেস্তরা খসে পড়া’সহ নানা ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকারভোগিরা।
অভিযোগ আছে, মিস্ত্রিদের খাবার খরচ, ঘর নির্মাণের সামগ্রী ক্যারিং খরচ ও অতিরিক্ত সিমেন্ট কেনার অজুহাতে উপকারভোগীদের কাছ থেকে আদায় করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা।
উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের উপকারভোগী হোসনেয়ারা বেগম, খোদেজা বেগম, লুৎফুর নাহারসহ উপজেলার একাধিক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, ঘর পাবো শুনে আমরা তো খুশি ছিলাম। ঘর নির্মাণের শুরু থেকে টেকসই কাজের আশায় ঠিকাদারকে মালামাল ক্যারিং খরচ, অতিরিক্ত সিমেন্ট ক্রয়ের জন্য টাকা প্রদান ও মিস্ত্রিদের খাবারের ব্যবস্থা করেও কোন লাভ হলো না। ঠিকাদারকে নানাভাবে অনুরোধের পরও তারা সরকারি নির্দেশনার বাহিরে তুলনামূলক কম সিমেন্ট, নিন্মমানের ইট, বালু ব্যবহার করে কাজ করেছেন। ব্যবহার করা হয়েছে নিন্মমানের থাই ও বৈদুতিক সামগ্রী।
ঘর নির্মাণের শুরুতে আড়াই ফুট নিচে সিসি ঢালাই করে ইটের গাঁতনি উঠানোর কথা থাকলেও সিসি ঢালাই না করেই মাটির এক ফুট নিচ থেকে কাজ শুরু করা হয়। অন্যদিকে দীর্ঘ তিন বছর শেষ হলেও কাজের ধীরগতির কারণে এখনো ঘর বুঝিয়ে দিতে পারেনি। ফলে ঘরে উঠতে না পেরে চরম হতাশায় ভুগতে হচ্ছে উপকারভোগীদের। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি ও কাজে ধীরগতির বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার মেলেনি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।
আরও পড়ুন: পা দিয়ে এইচএসসি পাস, এনআইডির জন্য ঘুরছেন অদম্য জসিম
স্থানীয় কুতুবপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের বলেন, বীর নিবাস শুধু একটি আবাসন প্রকল্প নয়, এটি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতার প্রতিফলন। অনেক জায়গায় এখনও বীর নিবাসের কাজ অসম্পূর্ণ, আর কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এসব বিষয়ে তদারকি বাড়ানো এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
কাজের ধীরগতির কথা স্বীকার করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমান উল্যাহ্ বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর কিছু ঠিকাদার কাজ করতে চায়নি। আমরা তাদের ডেকে মিটিং করেছি। দ্রুত কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। অপরদিকে, ঘরের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, বড় ধরনের অনিয়ম পেলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিবো।
বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, এটি অনেক আগের প্রকল্প, অন্যান্য জায়গায় এই প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও আমাদের এখানে প্রথম বরাদ্দের অর্থেই কাজ করতে হচ্ছে। তার পরও আমরা শতাধিক ঘর ইতিমধ্যে উপকারভোগীদের বুঝিয়ে দিয়েছি। অচিরেই বাকি ঘরগুলোর কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ঘরের কাজে অনিয়ম ও নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি