নাটকের মঞ্চে ‘জুলাই বিপ্লব’: ৯ দিনব্যাপী মুক্ত উৎসব শুরু

ছবি: নিউজবাংলাদেশ
জুলাই ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে শুরু হয়েছে ৯ দিনব্যাপী মুক্ত নাট্যোৎসব।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হবে। উৎসব চলবে ৮ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত।
জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার ও এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হচ্ছে সমসাময়িক রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক বাস্তবতাভিত্তিক নাটক।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, গত বছরের জনবিস্ফোরণ, গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও শিল্পের ভাষায় প্রতিরোধের প্রকাশকে কেন্দ্র করেই সাজানো হয়েছে এবারের নাট্যসূচি।
উৎসবের প্রথম দিনে মঞ্চস্থ হয় ‘রি-রিভোল্ট’, রচনা ও নির্দেশনায় নায়লা আজাদ, পরিবেশনায় টিম কালারস। নাটকটি রাজনৈতিক প্রতিরোধের ভেতরকার দ্বন্দ্ব ও বিকল্প বিপ্লবের ভাষা অনুসন্ধান করে।
উৎসবের বাকি দিনগুলোতে মঞ্চস্থ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন নাট্যদলের প্রগতিশীল ও অভিনব প্রযোজনাগুলো।
আরও পড়ুন: ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ বড় পর্দায়, কুসুম চরিত্রে জয়া আহসান
এর মধ্যে রয়েছে:
১. ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’ — রচনা ও নির্দেশনায় দীপক সুমন, পরিবেশনায় তীরন্দাজ রেপার্টরি
২. ‘দেয়াল জানে সব’ — নির্দেশনায় শাকিল আহমেদ সনেট, পরিবেশনায় স্পন্দন থিয়েটার সার্কেল
৩. ‘দ্রোহের রক্ত কদম’ — নির্দেশনায় ইরা আহমেদ, পরিবেশনায় এথেরা
৪. ‘৪০৪ছ নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি’ — নির্দেশনায় লাহুল মিয়া, পরিবেশনায় ফোর্থ ওয়াল থিয়েটার
৫. ‘এনিমেল ফার্ম’ (জর্জ অরওয়েলের উপন্যাস অবলম্বনে) — নির্দেশনায় সাইদুর রহমান লিপন, পরিবেশনায় রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়
৬. ‘আর কত দিন’ — নির্দেশনায় খন্দকার রাকিবুল হক, পরিবেশনায় অন্তর্যাত্রা
৭. ‘অগ্নি শ্রাবণ’ — নির্দেশনায় ইলিয়াস নবী ফয়সাল, পরিবেশনায় ভৈরবী
৮. ‘মুখোমুখি’ — নির্দেশনায় ধীমান চন্দ্র বর্মণ, পরিবেশনায় থিয়েটার ওয়েভ
৯. ‘ব্যতিক্রম ও নিয়ম’ — নির্দেশনায় আজাদ আবুল কালাম, পরিবেশনায় প্রাচ্যনাট
৮ আগস্ট সমাপনী দিনে মঞ্চস্থ হবে ‘আগুনি’, নির্দেশনায় কাজী নওশাবা আহমেদ এবং পরিবেশনায় টুগেদার উই ক্যান। নাটকটি বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে নারী প্রতিরোধ, রাজপথে ভূমিকা ও বিকল্প নেতৃত্বের সম্ভাবনা নিয়ে।
উৎসবের প্রতিটি প্রদর্শনী দর্শকদের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ও বিনামূল্যে উপভোগযোগ্য। তবে উৎসব কর্তৃপক্ষ নাট্যপ্রেমীদের সময়মতো এসে আসন গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।
এই উৎসবকে কেন্দ্র করে স্থানীয়-আন্তর্জাতিক নাট্য মহলে ইতোমধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। গত এক বছরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে নাটককে যে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেটিকে অনেকেই দেশের সাংস্কৃতিক পুনরুদ্ধার ও রাজনৈতিক জবাবদিহির ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এটি শুধু নাট্যোৎসব নয়, বরং আমাদের সময়ের নথি হয়ে থাকবে—যেখানে শিল্পীরা তাদের ভাষায় লিখে রাখছেন আন্দোলনের চিত্র, স্বপ্ন ও সম্ভাবনা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি