News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৩০ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ২১:০৩, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

ফলোআপ

‘ওয়াশিকুর হত্যার পরিকল্পনা হয় আগের রাতেই’

‘ওয়াশিকুর হত্যার পরিকল্পনা হয় আগের রাতেই’

ঢাকা: ব্লগার ওয়াশিকুরকে হত্যার পরিকল্পনা তৈরি হয় গত (রোববার) রাতে। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী এদিন সকালেই ঢাকায় এসে পৌঁছান চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র জিকরুল্লাহ। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া অন্য একজন আরিফুল। তিনি মিরপুরের দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, জিকরুল্লাহ রোববার সকালে ঢাকায় পৌঁছান। এরপর থেকেই তারা নজরদারি করতে থাকে বেগুনবাড়ি এলাকার দ্বীপিকার মোড়ে অবস্থিত ঝর্ণার বাড়ি নামের টিনের ৩ তলা বাড়িতে। যেখানে পরিবারের সঙ্গে বাস করতেন ওয়াশিকুর রহমান।

সোমবার সকালে এক সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করেন জিকরুল্লাহ, আরিফুর এবং আবু তাহের। নামাজ শেষে তারা অবস্থান নেয় বেগুনবাড়ি এলাকায়। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর সকাল পৌনে ১০টার দিকে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্য বাসা থেকে বের হন ওয়াশিকুর।

বাসা থেকে ঠিক পঞ্চাশ গজ সামনে পৌঁছাতেই পরিকল্পনা অনুযায়ী জিকরুল্লাহ, আরিফুর এবং আবু তাহের সঙ্গে থাকা চাপাতি দিয়ে ওয়াশিকুরের গলায় এবং মাথায় এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। ঘটনার এক পর্যায়ে ওয়াশিকুর মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ওই ৩ জন দৌঁড়ে স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করে।

এসময় দুই হিজড়া জিকরুল্লাহ এবং আরিফুরকে জাপটে ধরে। পরে এলাকাবাসী এসে ওই দু’জনকে পুলিশে সোপর্দ করে। তবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া আবু তাহের নিরাপদে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
    
সোমবার বিকেলে পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার নিউজবাংলাদেশকে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “ওয়াশিকুরের ক্ষেত্রে গলা ও মাথা ছিল হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তু। এর আগে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন ও লেখক অভিজিৎ রায়কে এভাবে হত্যা করা হয়েছিল।”

উপ কমিশনার আরো বলেন, “ধর্মীয় মতাদর্শ নিয়ে লেখালেখির কারণে ওয়াশিকুরকে হত্যার কথা গ্রেফতার হওয়া দুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। তারা কোনো সংগঠন বা দলের কি-না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

ওয়াশিকুর কোন ব্লগে লিখতেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জিকরুল্লাহ ও আরিফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে সামহোয়্যারইন ব্লগে ‘বোকা মানব’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থাকলেও তিনি মূলত লেখালেখি করতেন ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।”

এদিকে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পর তেজগাঁও থানায় যোগাযোগ করা হলে এসআই শাহিদা জানান, সোমবার সকালে বেগুনবাড়ি এলাকার দীপিকার মোড়ে এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে ধরে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি রক্তাক্ত চাপাতি।

নিহতের বোন শিলা নিউজবাংলাদেশকে জানান, ওয়াশিকুর তেজগাঁও কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে মতিঝিলের ফারইস্ট অ্যাভিয়েশন নামের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন। তার বাবার নাম টিপু সুলতান, বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামে।

ঢাকা মেডিকেলে সূত্রে জানা যায়, ওয়াশিকুরের থুতনি, গলা ও ঘাড়ে গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরের উল্টো পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়কে। এ হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু এখনও পাওয়া যায়নি। অভিজিতের স্ত্রী বন্যার অভিযোগ, হত্যাকণ্ডের সময় কাছেই পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএম

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়