আদিবাসীর লাশ দাফনের জায়গা নেই!
রাজশাহী: কবরের অভাবে বৃদ্ধের লাশ তিন দিন পরে কবর দিয়েছে আদিবাসী এক পরিবার।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের বিনোদপুর শুকান দিঘিপাড়া আদিবাসী পল্লিতে এ ঘটনা ঘটেছে।
অনেক দেন-দরবার শেষে বৃহস্পতিবার খাস জমিতে এক আদিবাসী বৃদ্ধ গৌউর ওরাওঁকে (৮৫) কবর দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ওই বৃদ্ধ নিজ বাড়িতে মারা যান।
স্থানীয় আদিবাসীরা জানান, “তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির বিনোদপুর শুকান দিঘি পাড়ার খাস জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ২৩টি আদিবাসী পরিবার বসবাস করে আসছে। তাদের জন্য কোনো কবরস্থান না থাকায় অনেকেই বাড়ির উঠানে মৃতের কবর দেয়।”
আদিবাসী পল্লীর মৃত ভোটলা উরাওয়ের ছেলে গৌউর ওরাওঁ (৮৫) দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় মারা যান। কবরস্থান না থাকায় মৃত্যুর তিনদিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে গৌউর ওরাওঁকে (৮৫) কবর দেওয়া হয়।
ওই আদিবাসী পল্লীর সন্ধ্যা রানী ওরাওঁ জানান, “তাদের কোনো কবরস্থান না থাকায় তার ফুপু ও ফুপা মারা যাওয়ার পর তাদের কবর দেয়া হয়েছে বাড়ির উঠানে।”
তিনি আক্ষেপ করে বলেন,“পাশের একটি পুকুর পাড়ে খাস জায়গা আছে। ওই জায়গাটি আমাদের কবরস্থানের উপযোগী জায়গা এক প্রভাবশালী দখলে রেখেছে। ওই জায়গাটি যদি সরকার আমাদের কবরস্থান হিসাবে বরাদ্দ দেয়, তাহলে আমাদের লাশ নিয়ে আর বসে থাকতে হবে না।”
মৃতের ভাগ্নে হরেন উরাও বলেন, “তাদের কোনো কবরস্থান না থাকায় এবং বাড়ির পাশে কোনো জায়গা না থাকায় আমার মামাকে কবর দেয়ার জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামের পাশে পুকুর পাড়ের খাস জায়গায় কবর দেওয়ার জন্য খোঁড়ার কাজ শুরু করি। ওই সময় পাশের চিমনা গ্রামের জহুর আলীর ছেলে মোজাম্মেল হক কবর খুঁড়তে বাধা দেয়।”
বৃহস্পতিবার সকালে পৌর মেয়র তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানীকে মোবাইলে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি তাদের ওই খাস জায়গায় কবর দেয়ার হুকুম দিলে তারা লাশ সেখানে কবর দেয়।
চিমনা গ্রামের জহুর আলীর ছেলে মোজাম্মেল হক জানান, “এই খাস জায়গা রাজশাহীর কোর্ট এলাকার এক ব্যক্তি লিজ নিয়ে আমশো গ্রামের সাত্তারের কাছে সাব লিজ দিয়েছে। আমি সাত্তারের হয়ে এই পুকুর ও জায়গা জমি দেখাশোনা করি। বিষয়টি আমি সাত্তারকে জানালে সে আমাকে লাশ কবর দিতে নিষেধ করেছেন, তাই আমি বাঁধা দিয়েছি।”
পৌর মেয়র ও তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, “বিষয়টি আসলে দুঃখজনক। আমি ঢাকায় আছি। ওই জায়গা যদি খাস হয়, তাহলে আমি তানোরে ফিরে খাস জায়গা দখল মুক্ত করে সে জায়গা আদিবাসীদের কবরস্থান হিসাবে সরকারিভাবে কাগজ করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেব।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম








