এনবিআরে ‘বিনাশৌর্য’ অভিযানে একযোগে শীর্ষ ৪৯ কর্মকর্তার বদলি

ফাইল ছবি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ চলমান প্রশাসনিক টানাপোড়েনের মধ্যে একদিনেই ৪৯ জন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
এই বদলিকে অনেকে নিয়মিত প্রক্রিয়া বললেও প্রশাসনের অভ্যন্তরে এটিকে আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ‘বিনাশৌর্য অভিযান’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) কাস্টমস ও ভ্যাট প্রশাসন-১ শাখার দ্বিতীয় সচিব মোহাম্মদ আবুল মনসুর স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে ২৫ জন অতিরিক্ত কমিশনার এবং ২৪ জন যুগ্ম কমিশনারকে বদলি করা হয়।
এনবিআরের বিভিন্ন শাখায় কর্মরত এই কর্মকর্তাদের দেশের নানা দপ্তরে পুনরায় পদায়ন করা হয়েছে।
বদলিকৃত ২৫ জন অতিরিক্ত কমিশনার হলেন মির্জা সহিদুজ্জামান, প্রমীলা সরকার, শামীমা আক্তার, মো. খায়রুল কবির মিয়া, ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম, আবুল আ’লা মোহাম্মদ আমিনুল ইহসান, মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান, নাহিদ নওশাদ মুকুল, মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, মো. মিলন শেখ, মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন পাহলোয়ান, মো. জিয়াউর রহমান খান, মো. রুহুল আমিন, আব্দুল রশীদ মিয়া, সাধন কুমার কুন্ডু, মোছা. শাকিলা পারভীন, খোজিস্তা আখতার, মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, নুসরাত জাহান, মোহাম্মদ বাপ্পী শাহরিয়ার সিদ্দিকী, রাকিবুল হাসান, রাফিয়া সুলতানা, রেজভী আহম্মেদ ও কামনাশীষ।
বদলিকৃত ২৪ জন যুগ্ম কমিশনার হলেন মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন, শাহীনূর কবির পাভেল, সারমিন আক্তার মজুমদার, হাসনাইন মাহমুদ, জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন রিজভী, মো. মিজানুর রহমান, মো. পায়েল পাশা, মো. নূর উদ্দিন লিমন, তাহমিনা আক্তার পলি, মো. শাকিল খন্দকার, স্নিগ্ধা বিশ্বাস, লুবনা ইয়াসমীন, মোহাম্মদ নাহিদুন্নবী, মো. খায়রুল আলম, নিতীশ বিশ্বাস, চপল চাকমা, সুশান্ত পাল, মো. রিয়াজুল ইসলাম, মো. পারভেজ রেজা চৌধুরী, অথেলা চৌধুরী, মো. সানোয়ারুল কবির, কাজী ইরাজ ইশতিয়াক ও ছৈয়দুল আলম।
আরও পড়ুন: এনবিআর ব্যবসায়ী, সরকার ও পুরো জাতিকে জ্বালাচ্ছে: শওকত আজিজ
বদলি হওয়া অনেক কর্মকর্তা সম্প্রতি গঠিত ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ ও “এনবিআর বিলুপ্তি ও চেয়ারম্যান অপসারণ” দাবির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই দাবিগুলোর প্রেক্ষিতে সরকারি মহলে অসন্তোষ তৈরি হয়।
অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, বদলি একটি “শৃঙ্খলা রক্ষার অংশ” হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে, যদিও সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে একে ‘নিয়মিত প্রক্রিয়া’ বলা হয়।
এ পর্যন্ত ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত, ৪ জনকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান চলছে।
জানা গেছে, বরখাস্তের অন্যতম অভিযোগ ছিল, বদলির আদেশ প্রত্যাখ্যান করে তা ছিঁড়ে ফেলা, যা সরকারি চাকরির আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব, বিক্ষোভে অংশগ্রহণ এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। যদিও প্রত্যক্ষভাবে সবাই আদেশ ছিঁড়ে ফেলেননি, তাদের অনেকেই ওই ঘটনার সময় কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করা হয়।
গত ২৮ জুলাই, ঢাকা কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পিংকু রায়-কে বরখাস্ত করা হয়।
২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ‘চাকরি হতে বরখাস্তকরণ’ গুরুদণ্ড দেওয়া হয়।
আন্দোলনের শুরু থেকে পদক্ষেপের পরিসংখ্যান:
- বদলি: কমপক্ষে ১৫০ জন
- বরখাস্ত: ২৪ জন
- বাধ্যতামূলক অবসর: ৪ জন
- দুদক অনুসন্ধানাধীন: ১৬ জন
অনেক কর্মকর্তাই মনে করছেন, এই পদক্ষেপগুলো রাজস্ব প্রশাসনে ‘ভয় ও নিয়ন্ত্রণের সংস্কৃতি’ গড়ে তুলছে। অনেকে এটিকে “নাগরিক স্বার্থে সংস্কার চাওয়ার শাস্তি” বলে অভিহিত করেছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজস্ব সংস্থার শৃঙ্খলা রক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি