সরকারি কর্মচারীদের জন্য আসছে নতুন পে-স্কেল
ফাইল ছবি
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন পে-স্কেল গেজেট আকারে বাস্তবায়ন করা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই। এজন্য রাজনৈতিক সরকার পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেই এ খাতে তহবিল বরাদ্দ রাখা হবে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে যদি নতুন পে-স্কেল কার্যকর করতে হয়, তাহলে চলতি বাজেটেই বরাদ্দ দিতে হবে। ডিসেম্বর থেকে বাজেট সংশোধন শুরু হবে, সেখানে নতুন পে-স্কেল কার্যকরের বিধান যুক্ত করা হবে।
সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গত ২৪ জুলাই একটি পে কমিশন গঠন করা হয়। এর চেয়ারম্যান সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান।
তিনি সম্প্রতি জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেওয়া হবে। কমিশনের প্রথম সভা হয়েছে গত ২৯ সেপ্টেম্বর, যেখানে সিদ্ধান্ত হয় পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে।
কমিশনের একজন সদস্য জানিয়েছেন, নতুন কাঠামোয় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেড নির্ধারণ কিংবা গড়ে কত হারে বেতন বাড়বে—সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১০:১। নতুন কাঠামোতেও এ অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে থাকবে বলে আভাস দিয়েছেন তিনি। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও একই অনুপাত প্রচলিত। বিদ্যমান ২০টি গ্রেড কমালেও এই অনুপাত বহাল রাখার সুপারিশ করবে কমিশন।
কমিশন চিকিৎসা ও শিক্ষা ভাতা বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে একজন কর্মচারী চাকরির শুরু থেকে অবসর পর্যন্ত মাসে ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। এ ভাতা বাড়ানো ছাড়াও অবসরোত্তর সময়ের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। সন্তানদের শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশও থাকবে।
আরও পড়ুন: তিন ব্যাংককে বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিলো বিএসইসি
২০১৫ সালের ড. ফরাসউদ্দিন কমিশনের মতো এবারও সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে পদোন্নতির প্রক্রিয়া সহজ করার প্রস্তাব আসতে পারে। বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী জাতীয় বেতন কাঠামোর আওতায় রয়েছেন।
তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিদ্যুৎ কোম্পানি, সশস্ত্র বাহিনী ও বিচার বিভাগের জন্য পৃথক কাঠামো কার্যকর আছে।
কমিশন বলছে, এগুলোকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জাতীয় কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
কমিশন আরও মনে করছে, নতুন কাঠামো বেসরকারি খাতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য অক্টোবর মাসে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবে কমিশন। ইতোমধ্যে সরকার পোশাকসহ ৪৫টি খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছে। কমিশন সুপারিশ করবে, এসব খাতের মজুরি সরকারি কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য নতুন কাঠামোয় বিশেষ প্রণোদনা ভাতা রাখার প্রস্তাব থাকবে।
কমিশনের মতে, এসব খাতে তরুণদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় উদ্ভাবন ব্যাহত হচ্ছে। মেধাবীদের আকৃষ্ট করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের কাঠামো অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন। দেশে সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। সশস্ত্র বাহিনী, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ লাখে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৪ সালের নভেম্বরে ভাতা সংস্কার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১০ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটির চেয়ে বেশি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








