সুপার ফোরে বাংলাদেশের উড়ন্ত সূচনা

ছবি: সংগৃহীত
স্বপ্নের মতো শুরু হয়েছে বাংলাদেশের সুপার ফোর অভিযান। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে ৪ উইকেটে হারিয়ে দুর্দান্ত সূচনা করেছে টাইগাররা।
গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানকে হারিয়ে সুপার ফোরে উঠেছিল বাংলাদেশ। এবার মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কার, যারা কিনা গ্রুপ পর্বেই পরোক্ষভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিল। তবে সুপার ফোরে এসে করুণ পরিণতির শিকার হয় লঙ্কানরা। গ্রুপ পর্বে হারের প্রতিশোধও শোধ নেয় লাল-সবুজ বাহিনী।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। শুরুতে আক্রমণাত্মক সূচনা করে শ্রীলঙ্কা। ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ১৫ বলে ২২ এবং কুশল মেন্ডিস ২৫ বলে ৩৪ রান করেন। চারিথ আসালাঙ্কা ১২ বলে ২১ এবং কুশল পেরেরা করেন ১৬ রান। তবে মূল ভরসা ছিলেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা।
বাংলাদেশি বোলারদের দাপট সামলে তিনি খেলেন ৩৭ বলে ৬ চার ও ৬ ছক্কায় অপরাজিত ৬৪ রানের ঝড়ো ইনিংস। শেষ পর্যন্ত লঙ্কানরা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১৬৮ রান।
বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজুর রহমান দুর্দান্ত বোলিং করে ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। এই কীর্তির মাধ্যমে তিনি টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকায় সাকিব আল হাসানকে ছুঁয়ে ফেলেন—দুজনের উইকেটই এখন ১৪৯টি, তবে সাকিবের লাগে ১২৯ ম্যাচ, আর মুস্তাফিজের লাগে মাত্র ১১৭ ম্যাচ। শেখ মেহেদী হাসান ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন, আরেকটি উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ।
১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ইনিংসের পঞ্চম বলেই হারায় তানজিদ হাসান তামিমকে (০)। নুয়ান থুশারার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। স্কোরবোর্ডে তখন মাত্র ১ রান।
চাপ সামাল দেন সাইফ হাসান ও লিটন দাস। তারা গড়েন ৫০ রানের জুটি। লিটন ১৬ বলে ৩ চারে ২৩ রান করে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার শিকার হন। তবে সাইফ থামেননি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৩৬ বলে ফিফটি তুলে নিয়ে শেষ পর্যন্ত ৪৫ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় খেলেন ক্যারিয়ারসেরা ৬১ রানের ইনিংস।
আরও পড়ুন: টেস্ট-ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসছে পাকিস্তান
তারপর দায়িত্ব নেন তাওহীদ হৃদয়। ব্যাটিং খরার অবসান ঘটিয়ে নিজের পঞ্চাশতম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলেন ৩৭ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫৮ রানের দারুণ ইনিংস। এই ইনিংস দিয়েই তিনি দেশের অষ্টম ব্যাটার হিসেবে পেরিয়ে যান এক হাজার রান মাইলফলক।
হৃদয়ের সঙ্গে শামীম হোসেন ১২ বলে অপরাজিত ১৪ রানের ইনিংসে গড়েন গুরুত্বপূর্ণ জুটি। তবে শেষ ওভারে ম্যাচে নাটকীয়তা তৈরি হয়।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫ রান। বোলিংয়ে আসেন দাসুন শানাকা। প্রথম বলেই জাকের আলী চার মেরে ম্যাচ টাই করে দেন। তখন ৫ বলে দরকার মাত্র ১ রান। কিন্তু দ্বিতীয় বলে আউট হন জাকের। তৃতীয় বল ডট হয়। চতুর্থ বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন শেখ মেহেদী। তখন চাপ চরমে ওঠে।
শেষমেশ পঞ্চম বলে শর্ট থার্ডম্যান অঞ্চলে ঠেলে কাঙ্ক্ষিত এক রান নেন নাসুম আহমেদ। তাতেই ১ বল হাতে রেখে বাংলাদেশ জয় তুলে নেয়।
এটি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। এর আগে ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই ২১৫ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ।
সাইফ হাসান ও তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটিং, মুস্তাফিজের অসাধারণ বোলিং—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে এক স্মরণীয় জয়। যদিও ফিল্ডিংয়ে কিছু ক্যাচ ফসকে গেছে, তবু দলগত পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়।
এই জয়ে ২ পূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে সুপার ফোরে উড়ন্ত সূচনা করেছে বাংলাদেশ। এবার তাদের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ—ভারত ও পাকিস্তানের মতো দুই পরাশক্তি।
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৬৮/৭ (শানাকা ৬৪*, মেন্ডিস ৩৪, নিসাঙ্কা ২২, আসালাঙ্কা ২১, কুশল পেরেরা ১৬; মুস্তাফিজ ৩/২০, মেহেদী ২/২৫, তাসকিন ১/৩১)
বাংলাদেশ: ১৯.৫ ওভারে ১৬৯/৬ (সাইফ ৬১, হৃদয় ৫৮, লিটন ২৩, শামীম ১৪*, জাকের ৪; শানাকা ২/২১, হাসারাঙ্গা ২/২২, থুশারা ১/৩৬)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: সাইফ হাসান।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি