শেখ হাসিনা-কামালের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
ফাইল ছবি
জুলাই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) তাদের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, রায়ের প্রকাশের দিন থেকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তারা আপিল করতে পারবেন। এর আগে ১৭ নভেম্বর একই মামলায় প্রথম দফায় মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন রায়ে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এই সিদ্ধান্ত নেন। রায়দলর অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায়ে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষত, শেখ হাসিনাকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশি রাজসাক্ষী বা ‘অ্যাপ্রুভার’ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু হয় দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ছয় অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার ফাইল থেকে। বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী এ অংশ পাঠ করেন। পরবর্তীতে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায়ের মাধ্যমে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলা ছিল এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের। ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। একই দিনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
প্রাথমিকভাবে মামলায় শেখ হাসিনা একমাত্র আসামি ছিলেন। তবে চলতি বছরের ১৬ মার্চ প্রসিকিউশন আবেদন করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করার। ট্রাইব্যুনাল তা অনুমোদন করেন।
আরও পড়ুন: ডিবি হারুনের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ
মামলার তদন্ত সংস্থা ১২ মে চলতি বছরের তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে জমা দেয়। ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়। মোট পাঁচটি অভিযোগে তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- ১৪ জুলাই গণভবনে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান।
- হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে নির্মূলের নির্দেশ।
- রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে হত্যা।
- রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যা।
- আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা।
১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। ওইদিনই সাবেক আইজিপি মামুন মানবতাবিরোধী অপরাধে তার সম্পৃক্ততা স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ হওয়ার আবেদন করেন।
যুক্তিতর্ক ১২ অক্টোবর শুরু হয়ে ২৩ অক্টোবর শেষ হয়। প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেন। আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন খালাসের আবেদন করেন। একইভাবে সাবেক আইজিপি মামুনের পক্ষে যায়েদ বিন আমজাদ খালাসের আবেদন জানান।
এ রায়ই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মামলা রায় হিসেবে ইতিহাসে লেখা হলো।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








