ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ, আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক
ফাইল ছবি
চলতি বছরের শুরু থেকে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৯১,৬০২ জন, মারা গেছেন ৩৬৭ জন, এবং সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন ৮৮,৯৪৯ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশব্যাপী আরও ৬১৫ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২,২১৭ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৭০ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ২,৫৮৬ জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা চলছে। নতুন শনাক্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৭৭, চট্টগ্রামে ৮৫, ঢাকা বিভাগের বাইরে ১২৮, ঢাকা উত্তর ১২৬, ঢাকা দক্ষিণ ১০৩, খুলনায় ৩৭, ময়মনসিংহে ৩৪, রাজশাহীতে ২২ এবং সিলেটে ৩ জন রয়েছেন। মৃত্যুর মধ্যে দুজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং একজন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৮২ জন, যা নিয়ে মোট ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯,৬৩১ জন।
মাসভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেয়েছে। জানুয়ারিতে মাত্র ১,১৬১ জন আক্রান্ত ও ১০ জনের মৃত্যু হলেও জুনে আক্রান্ত বেড়ে ৫,৯৫১ এবং মৃত্যু ১৯ জনে পৌঁছেছে। জুলাই ও আগস্ট মাসে সংক্রমণ ১০ হাজারের বেশি হয়েছে এবং মৃত্যু ৪১ ও ৩৯ জন। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। নভেম্বর মাসে ২৫ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২১,৭৪০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৮৯ জন।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু ২, নতুন আক্রান্ত ৭০৫
লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের হার ৬২.৪ শতাংশ এবং নারীর হার ৩৭.৬ শতাংশ। মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুরুষের অংশ ৫১.৮ শতাংশ, নারী ৪৮.২ শতাংশ। বয়সভিত্তিক হিসেবে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী জনগণ সর্বাধিক আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যাতেও এই বয়সী মানুষদের সংখ্যা বেশি।
বিভাগভিত্তিক পরিস্থিতিতে বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক এবং সিলেটে সর্বনিম্ন। বরিশাল বিভাগে সিটি কর্পোরেশনের বাইরে ভর্তি হয়েছেন ২০,৩০৬ জন, চট্টগ্রামে ১২,৯৪১ জন, ঢাকা বিভাগের বাইরে ১৫,৬৪০ জন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যথাক্রমে ১৪,৪০৬ এবং ১৩,০৬০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুর দিক থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সবচেয়ে বেশি, ১৬৭ জন, এবং সিলেট বিভাগের মৃত্যু সর্বনিম্ন, মাত্র ২ জন। খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশালেও মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
ডেঙ্গুর সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখিতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাসার বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত সংক্রমণ চলবে। ঢাকা শহরের উঁচু ভবনের বেসমেন্ট, পার্কিং এলাকা ও নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে এডিস মশার লার্ভা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি জমে থাকা প্রতিটি ছোট পাত্রও সংক্রমণের জন্য উপযুক্ত। নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি, আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পানি জমতে না দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, ডিসেম্বর মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে, তবে নতুন বছরে সংক্রমণ কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে।
ছয় বছরের তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১,০১,৩৭৪ জন, মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের। ২০২১ সালে আক্রান্ত ২৮,৪২৯, মৃত্যু ১০৫, ২০২২ সালে আক্রান্ত ৬২,৩৮২, মৃত্যু ২৮১। ২০২৩ সালে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়—আক্রান্ত হন ৩,২১,১৭৯ জন এবং মৃত্যু হয় ১,৭০৫ জনের। ২০২৪ সালে আক্রান্ত ১,০১,২১৪, মৃত্যু ৫৭৫ এবং চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯১,৬০২ জন, মারা গেছেন ৩৬৭ জন।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞরা নাগরিক সচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন। নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা, আবর্জনা ও লার্ভা নিয়ন্ত্রণ, এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








