News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

৩ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু

৩ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু

ছবি: সংগৃহীত

তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। ফলে দেশের সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর ঠিক আগে এই কর্মবিরতি শুরু হওয়ায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাতে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ জানায়, ৩০ নভেম্বর থেকে কর্মসূচি শুরু করার কথা থাকলেও দাবিগুলোতে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় কর্মসূচি এগিয়ে আনা হয়েছে। সংগঠনটি অভিযোগ করে, শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বৈঠকগুলোতে আশ্বাস পাওয়া সত্ত্বেও বাস্তবে এখনো কোনো কার্যকর উদ্যোগ বা প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।

৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি এবং শাহবাগে ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচির সময় পুলিশি হামলায় বহু শিক্ষক আহত হন। আন্দোলনের পরদিন ৯ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে টানা দুদিন আলোচনা হয়। উভয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই তিন দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়; এমনকি অর্থ মন্ত্রণালয় ১০ নভেম্বর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেই আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করে। তবে শিক্ষক সংগঠনের দাবি—১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

শাহবাগে হামলায় আহতদের একজন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ঝিনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা আক্তার ১৬ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যু শিক্ষক সমাজে ক্ষোভ ও হতাশা আরও তীব্র করেছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ভাষ্য—এ মৃত্যু প্রমাণ করে সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও বৈষম্যের পরিবেশে কাজ করছেন।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৩ দিনের কর্মবিরতি শুরু

সহকারী শিক্ষকরা যে তিনটি মূল দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন, তা হলো, 

  • বেতন স্কেল সংশোধন: সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান ১৩তম গ্রেড থেকে উন্নীত করে ১০ম বা ১১তম গ্রেডে উন্নয়ন।
  • উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা দূরীকরণ: চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার ক্ষেত্রে বহুদিনের প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা।
  • বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা: সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি বহাল রাখা।

শিক্ষকদের অভিযোগ, স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারীরা অন্যান্য সরকারি খাতে ১০ম গ্রেডে অবস্থান করলেও প্রাথমিক শিক্ষকেরা অতিরিক্ত যোগ্যতা (সিএনএড, বিপিএড, বিটিপিটি) অর্জন করেও এখনো ১৩তম গ্রেডে আটকে আছেন।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ‘ঐক্য পরিষদ’ ২৫–২৭ নভেম্বর তিন দিনের কর্মবিরতি পালন করেছে। 

সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেরা বেগম বলেন, আশ্বাসের বাইরে বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই। তাই সহকারী শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে কর্মবিরতিতে গেছেন। 

তাদের দাবিও একই, ১১তম গ্রেড, উচ্চতর গ্রেডে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৭ থেকে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ৩ লাখ ৮৪ হাজার এবং শিক্ষার্থী প্রায় এক কোটি। ২৪ এপ্রিল সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীত করলেও সহকারী শিক্ষকরা তা নিজেদের প্রতি ‘বৈষম্যমূলক’ হিসেবে দেখছেন।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর কথা। কিন্তু আজ থেকে সব বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কয়েকজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন—যদি কর্মবিরতি দীর্ঘায়িত হয়, পরীক্ষার সময়সূচি পুনর্গঠন ছাড়া উপায় থাকবে না।

সহকারী শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন, ১১তম গ্রেডসহ তিন দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। 

অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো নতুন কোনো আলোচনার উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে শিক্ষক-প্রশাসনের অচলাবস্থা কতদিন স্থায়ী হবে- তা এখনো স্পষ্ট নয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়