ঠাকুরগাঁও সফরে কবিতায় ‘শেকড়ের বার্তা’ দিলেন মির্জা ফখরুল
ছবি: সংগৃহীত
ঠাকুরগাঁও সফরে একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্র, সংস্কৃতি ও দুর্যোগ মোকাবিলা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে ঠাকুরগাঁও শহরের ইএসডিও কার্যালয়ে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ভবিষ্যৎ ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত জাতিকে বড় মাশুল দিতে বাধ্য করবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণ সঠিক পথ বেছে নেবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস অভ্যুত্থান ও প্রতিরোধের ইতিহাস। ’৭১ সালে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রের স্বপ্নে লড়াই হয়েছিল। আজও দেশের অধিকাংশ মানুষ সেই পথেই আছে।
তার ভাষায়, আমরা বিশ্বাস করি সত্যের জয় হবেই, যার প্রমাণ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন।
এর আগে দুপুরে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির নতুন কার্যালয় উদ্বোধন করেন। সেখানে তিনি ঢাকার করাইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, কয়েক হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। এটি দরিদ্র মানুষের ওপর এক চরম আঘাত। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ক্ষমতা দীর্ঘায়ু হলে স্বেচ্ছাচারিতা বাড়ে: ফখরুল
একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ঘাটতি এবং আইন না মানার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা বাড়ছে। যথাযথ ব্যবস্থা থাকলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
ঠাকুরগাঁও শহরের কোর্ট চত্বরে বাউলদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় বিএনপি মহাসচিব তীব্র নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আবহমান গ্রামীণ সংস্কৃতির ধারক-বাহক বাউলদের ওপর হামলা উগ্র ধর্মান্ধদের কাজ। এ ধরনের হিংসা ও প্রতিহিংসা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি করেন। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলীসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে এক ব্যক্তিগত মুহূর্তে মির্জা ফখরুল নিজের পৈতৃক বাসভবনের বারান্দায় কবি আহসান হাবীবের কালজয়ী কবিতা ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ আবৃত্তি করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ দৃশ্য ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ আবৃত্তি ছিল প্রতীকী বার্তা—নিজ ভূমি ও দেশের সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রকাশ।
অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে বলেন, এটি বোঝায় তিনি দলের শীর্ষ পদে থেকেও মাটির মানুষ। তার বার্তা কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে শেকড়ের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতীক হয়ে পৌঁছেছে।
ঠাকুরগাঁও সফরে বিএনপি মহাসচিব একদিকে আসন্ন নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে করাইল অগ্নিকাণ্ড ও বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা দাবি করেছেন।
একই সঙ্গে কবিতার আবৃত্তির মাধ্যমে তিনি ব্যক্তিগত ও সাংস্কৃতিক আবহে ‘শেকড়ের বার্তা’ পৌঁছে দিয়েছেন, যা জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








