News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:০৪, ২৮ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১৯:৩৯, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

ইসলামে হাস্যরসের গুরুত্ব

ইসলামে হাস্যরসের গুরুত্ব

মনোবিজ্ঞানীরা মানুষের সুস্থতার জন্য আনন্দ ও চিত্ত বিনোদনকে খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও আনন্দ ও চিত্ত বিনোদনকে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হয়। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, চিত্তবিনোদন, হাসি-খুশি ও প্রফুল্লতা বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে এবং শরীরে নানা ধরণের ক্যান্সারের দ্রুত ছড়িয়ে পড়াকেও ঠেকিয়ে রাখে।

রাসূল (সা.) এ হাস্যরস সম্পর্কে বলেছেন যে, “কেউ একজন মুমিনকে আনন্দ দিল, সে যেন আমাকে আনন্দ দিল, আর যে আমাকে খুশি করল, সে অবশ্যই আল্লাহকেও খুশি করল।"

বিশ্বনবী (সা.)`র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন, “আনন্দ ও চিত্ত বিনোদন মানুষের জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সহায়তা করে এবং এর মাধ্যমে দুনিয়ার বা পার্থিব বিষয়ে অনেক সাফল্য পাওয়া যায়।”
 
একইভাবে পরিবার ও সমাজের উন্নতির জন্যেও দুঃখ ও হতাশা দূর করা এবং আনন্দ ও চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করা জরুরী। আনন্দের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো রসিকতা। রসিকতা যে খারাপ জিনিস তা কিন্তু নয়, কেননা টেনশন, হতাশা, বিষাদগ্রস্ততা দূর করার জন্যে হাসি-রসিকতা একটি ভালো উপাদান। মানসিক প্রফুল্লতার জন্যেও হাস্যরসের যথেষ্ট উপযোগিতা রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো রসিকতার সীমা মেনে চলা। সীমা লঙ্ঘন হয়ে গেলে অনেকের মনেই আঘাত লাগতে পারে। তাই সীমারেখাটি আগে জানতে হবে এবং পরে তা মানতে হবে। কোনোভাবেই অপরকে উত্যক্ত করা বা খোঁচা দেয়ার জন্যে কৌতুক করা যাবে না।
 
এ প্রসঙ্গে ইমাম সাদেক (আ.) এর একটি বর্ণনার উদ্ধৃতি দেয়া যায়। তিনি একবার ইউনূস শিবাণীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘লোকজনের সাথে কী পরিমাণ কৌতুক মজা কর? ওই লোক জবাবে বলেছিল, খুব কম। ইমাম সাদেক (আ.) তখন তীরস্কারের সুরে বলেছিলেন কেন লোকজনের সাথে হাসি-মজা কর না? হাসি-কৌতুক সুন্দর আচার-ব্যবহার আর সচ্চরিত্রের অংশ।`
 
ইসলামের দৃষ্টিতে মুমিনদের একটি দায়িত্ব হলো দ্বীনী ভাইদেরকে আনন্দ দেয়া। হযরত আলী (আ.) বলেছেন- “রাসূল (সা.) যখনই তাঁর কোনো সহচরকে বিষন্ন বা মনমরা অবস্থায় দেখতেন, তখনই কৌতুক মজা করে তাকে প্রফুল্ল করে তুলতেন এবং বলতেন, নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম আমল হলো মুমিনদের অন্তরকে প্রফুল্ল করা। অবশ্য এমনভাবে হতে হবে যেন তাতে গুনাহর লেশমাত্র না থাকে।”
 
হাস্য রসিকতা বা কৌতুক পরস্পরকে ঘনিষ্ট করে তোলে। এ কারণে পরিপূর্ণ জীবন বিধান ইসলামে কৌতুককে বিশেষ করে মুমিনদের জন্যে জরুরি একটি বিষয় বলে মনে করা হয়।
 
ইমাম হাসান (আ.) কে ইমাম আলী (আ.) এক উপদেশ বাণীতে বলেছেন, “হে সন্তান আমার, সে-ই ইমানদার যে তার দিনরাতের সময়গুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নেয়। একটি অংশকে কাজে লাগায় আধ্যাত্মিকতার চর্চা এবং আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করার মধ্য দিয়ে। অপর একটি অংশকে কাজে লাগায় পার্থিব জগতের প্রয়োজনীয়তা ও জীবন জীবিকার চাহিদা মেটাতে। আর তৃতীয় অংশটিকে নির্দিষ্ট করে বৈধ এবং হালাল বিনোদন উপভোগ করার জন্যে।”
 
রাসূলে খোদা (সা.) এবং আমিরুল মুমেনীন আলী (আ.) এর খুরমা খাওয়া নিয়ে চমৎকার একটি কৌতুক আছে।

একদিন এই দুই মহান মনীষী একসাথে বসে খুরমা খাচ্ছিলেন। রাসূলে খোদা (সা.) খুরমা খেয়ে বিচিগুলো আলী (আ.) এর সামনে রাখলেন। খাওয়া শেষে রাসূল বললেন- “যার সামনে বীচি বেশি সে অতিভোজী।”

আমিরুল মুমেনিন দেখলেন রাসূলের সামনে কোনো বীচিই নেই, তাই জবাব দিলেন- যে বীচিশুদ্ধ খুরমা খেয়েছে সে-ই বেশি পেটুক।
 
অপর এক বর্ণনায় আছে, একবার আব্দুল মোত্তালিবের মেয়ে রাসূলে খোদার বৃদ্ধা ফুফু সফিইয়্যাহ নবীজীর কাছে এলেন। রাসূলকে তিনি বললেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার জন্যে একটু দোয়া করো যেন বেহেশ্তবাসী হতে পারি।

নবীজী একথা শুনে হাসতে হাসতে মজা করে বললেন- ‘বৃদ্ধ মহিলারা বেহেশতে যাবে না।` সফিইয়্যাহ ভীষণ বিষন্ন হয়ে পড়লেন এবং ফিরে গেলেন।

নবীজী তখন মুচকি হেসে বললেন- সফিইয়্যাকে বলো- “বৃদ্ধ মহিলারা আগে তরুণী হবে তারপর বেহেশতে যাবে!”

নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়