News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

ভোলাবাসীর বিক্ষোভে অবরুদ্ধ তিন উপদেষ্টা, পদত্যাগের দাবি

ভোলাবাসীর বিক্ষোভে অবরুদ্ধ তিন উপদেষ্টা, পদত্যাগের দাবি

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জানুয়ারিতে ভোলা–বরিশাল সেতুর কাজ শুরু হবে বলে সরকারের পূর্ব ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভোলায় সফররত তিন উপদেষ্টাকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে ‘আমরা-ভোলাবাসী’ নামের সংগঠনের সদস্যরা বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় ২০ মিনিট ধরে উপদেষ্টাদের গাড়ি ঘিরে রেখে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। একপর্যায়ে কয়েকজন আন্দোলনকারী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে উপদেষ্টাদের যাত্রা বন্ধ করে দেন।

অবরুদ্ধ তিন উপদেষ্টার মধ্যে ছিলেন– সেতু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন।

দুপুর ৪টার দিকে তারা ভোলা জেলা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় স্থানীয়রা ভোলা–বরিশাল সেতুর নির্মাণ কাজের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ও অগ্রগতি জানতে চাইলে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির জানান, পূর্বের ডিজাইনে সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। নতুন ডিজাইন কাজ জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে শেষ হলে এরপর মূল কাজ শুরু হবে। তিনি কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা অগ্রগতির কথা জানাননি।

স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে সভা শেষে উপদেষ্টাদের চারপাশ ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় দুই যুবক গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন এবং বাকি উপস্থিতরা ফাওজুল কবির খান ও শেখ বশির উদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা হস্তক্ষেপ করেন। এরপর তিন উপদেষ্টা নিরাপদে জেলা সার্কিট হাউসের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

আরও পড়ুন: জেনেভা ক্যাম্পে গোপন ককটেল কারখানার সন্ধান, উদ্ধার ৩৫

‘আমরা-ভোলাবাসী’ কমিটির সদস্য মেহেদি হাসান বলেন, সম্প্রতি পাঁচ দফা দাবিতে আমরা ভোলায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুললে কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তখন তারা বলেছিলেন আমরা সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করি। উপদেষ্টা ফাওজুল কবির ঘোষণা দিয়েছিলেন ডিসেম্বর নাগাদ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর কাজ শুরু হবে। আজ তিনি বলছেন, নকশার কাজও শুরু হয়নি, বিষয়টি নীতিগত সিদ্ধান্তে আটকে আছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি।

আরেক আন্দোলনকারী মাহাদী হাসান জানান, উপদেষ্টা সভায় সেতু বিষয়ে কিছুই জানেন না বলেছিলেন। তাই আমরা আমাদের প্রতিবাদ আরও জোরালো করেছি।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তরিকুল ইসলাম কায়েদ বলেন, উপদেষ্টা ফাওজুল কবির আগে বারবার বলেছিলেন ডিসেম্বরে দৃশ্যমান কাজ শুরু হবে। এখন তিনি জানালেন আরও ছয় মাস লাগবে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে আমরা অবিলম্বে তার পদত্যাগ চাই। একই সঙ্গে উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনের পদত্যাগও দাবি করছি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে চলা পাঁচ দফা দাবির মধ্যে প্রধান হলো– ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণ, ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ, স্থানীয় শিল্পায়ন, অন্যান্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এই দাবির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভোলার বাইরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।

ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাহাদাৎ মো. হাসনাইন পারেভজ বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা সেতু ও গ্যাস সংযোগের দাবিতে গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েছিলেন। পরে পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে এবং উপদেষ্টারা সময়সূচি অনুযায়ী স্থান ত্যাগ করেছেন।

উল্লেখ্য, ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণ কাজ নিয়ে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি এবং সরকারের পূর্ব ঘোষণা বাস্তবায়নের বিলম্বই উত্তেজনার মূল কারণ। সেতু নির্মাণের অগ্রগতি, নকশার নতুন প্রক্রিয়া এবং উপদেষ্টাদের পূর্ব ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই প্রতিবাদ গড়ে ওঠে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়