‘নতুন কুঁড়িতে নিজেকে নতুনভাবে খুঁজছে শিশুরা’
ছবি: সংগৃহীত
শিশু-কিশোরদের সৃজনশীলতা ও প্রতিভা বিকাশে নতুন দিক তৈরি করেছে ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মন্তব্য করেন, নতুন কুঁড়ির মাধ্যমে শিশু-কিশোররা নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করার সুযোগ পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে বাংলাদেশ টেলিভিশনের আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু-কিশোররা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে এবং তারা যাতে তাদের প্রতিভা বিকশিত করতে থাকে সে জন্য নিয়মিত অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা শিশু-কিশোরদের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করেছে, যেখানে তারা নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারছে এবং নতুন করে নিজেদের আবিষ্কার করতে পারছে।
তিনি আরও বলেন, যে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে, সে-ই প্রকৃত অর্থে এগিয়ে যেতে পারে। এই প্রতিযোগিতাটি সেই আত্ম-আবিষ্কারেরই সুযোগ করে দিয়েছে। না হলে আমি কখনোই জানতাম না যে আমি ক্লাসে প্রথম হতে পারি।
উপদেষ্টা জোর দিয়ে উল্লেখ করেন, শিশুদের কেবল নাচ-গান বা বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে তাদের পুরো সম্ভাবনা প্রকাশ পাবে না। তাদের রচনা, প্রযুক্তি, খেলাধুলা এবং উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন কৌশল ও দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ দিতে হবে। এই প্রতিযোগিতা ফ্যাশন ডিজাইন, খাদ্য প্রস্তুতি, বিজ্ঞান, ব্যবসা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে নতুন প্রতিভা তুলে আনবে। কেউ ভালো গায়ক না হলেও ভালো বিজ্ঞানী বা উদ্যোক্তা হতে পারে—এই প্রতিযোগিতা সেই সুযোগ তৈরি করে দেবে।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিবেন প্রধান উপদেষ্টা
ড. ইউনূস প্রতিযোগিতার তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, এই প্রতিযোগিতা আমাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলে। না হলে আমরা যেভাবে আছি সেভাবেই থেকে যেতাম। প্রতিযোগিতা আমাদের জানায়—আমারও সক্ষমতা আছে, আমি আরও কিছু করতে পারি।
তিনি বিচারকদের প্রশংসা করে বলেন, যারা তাদের মেধা ও সময় দিয়ে বিচারকার্যে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাদের জন্য এক জোরে হাততালি প্রাপ্য। অভিভাবকরাও প্রশংসার দাবিদার—কারণ তারা সন্তানদের পাশে থেকেছেন, সহযোগিতা করেছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এই সাফল্যের অংশীদার।
ড. ইউনূস অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা বিজয়ী হয়েছেন, তাদের অভিনন্দন। যারা অংশ নিয়েও জিততে পারেননি, তাদেরও সমান অভিনন্দন—কারণ অংশগ্রহণ করাটাই বড় অর্জন। যারা জিততে পারেনি, তাদের মনে একটা জেদ কাজ করবে—‘আমি কেন পারলাম না?’ এই জেদই মানুষকে বদলে দেয়। এই প্রতিযোগিতা সেই প্রেরণাই সৃষ্টি করে। পরের বছর তারা আরও ভালো করবে, আরও এগিয়ে যাবে। এটাই আত্ম-আবিষ্কারের শুরু।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে, কারণ এর মাধ্যমেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, এটা প্রথম আয়োজন, তাই কিছু ভুলভ্রান্তি থাকতেই পারে। এতে লজ্জার কিছু নেই, বরং এটি পরবর্তী আয়োজনকে আরও পরিপূর্ণ করবে। ভবিষ্যতে যেন আরও প্রতিভাবান অংশগ্রহণকারীকে আমরা আবিষ্কার করতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতায় সারা দেশের হাজারো শিশু অংশ নেন। নাচ, গান, আবৃত্তি, কৌতুক, গল্প বলা, অভিনয়সহ মোট ১২টি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক ও বিভাগীয় পর্ব শেষে নির্বাচিত প্রতিযোগীদের নিয়ে হয় চূড়ান্ত পর্ব। আজ প্রধান উপদেষ্টা ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপের সেরাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে ‘নতুন কুঁড়ি-২০২৫’ প্রতিযোগিতার ক শাখার চ্যাম্পিয়ন প্রিয়শী চক্রবর্তী ও খ শাখার চ্যাম্পিয়ন শুভমিতা তালুকদারের হাতে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং তিন লাখ টাকার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ এখন আর সীমার মধ্যে নেই—বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম সেই বিশ্বমানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে। আমি সবাইকে আবারও অভিনন্দন জানাই—আয়োজক, অংশগ্রহণকারী, অভিভাবক ও শিক্ষক সবাইকে। আগামী বছর এই প্রতিযোগিতা আরও জাঁকজমকপূর্ণ ও আনন্দময় হোক—এই কামনা করি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








