‘সেফ এক্সিট’ খুঁজছে কারা, নাহিদ ইসলামকেই স্পষ্ট করতে হবে

ফাইল ছবি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সেই বক্তব্যকে স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ 'সেফ এক্সিট' বা নিরাপদ প্রস্থানের পথ খুঁজছেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো নিরাপদ প্রস্থান খুঁজছেন না এবং দেশের নানা ‘ঝড়-ঝঞ্ঝা’ মোকাবিলা করে তিনি অতীতেও দেশে ছিলেন, আগামীতেও দেশেই থাকবেন।
নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেছেন এবং নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন।
তিনি এও বলেন যে, অনেক উপদেষ্টা নিজেদের আখের গুছিয়েছেন বা গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, সময় এলে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে।
তার এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নাহিদ ইসলাম কী কারণে এই বক্তব্য দিয়েছেন, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন—সেটা তার অভিমান বা অন্য কোনো কারণে কিনা।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, কোনো উপদেষ্টা সেফ এক্সিট খুঁজছে বলে আমার জানা নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো সেফ এক্সিট খুঁজছি না। অনেক ঝড়ঝাপটা মোকাবিলা করে দেশে থেকেছি। এখনো দেশেই থাকব। বাকিটা জীবনও বাংলাদেশেই কাটিয়ে যাবো।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকেই পরিষ্কার করতে হবে, কারা এই সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) চায়। রিজওয়ানা হাসান মন্তব্য করেন, অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য বা অভিযোগ পেলে সরকার অবশ্যই তা নিয়ে কাজ করবে।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে পরিবেশ ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা জানান, এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে, অন্য কোনো সরকারের অধীনে নয়। সরকার একটি স্বচ্ছ নির্বাচন চায় এবং সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন: সেফ এক্সিটের খোঁজে উপদেষ্টারা, বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ নাহিদের
কোন দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না করার বিষয়টি প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটি আইনি প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, সরকারের বিষয় নয়। কোনো দলের অংশগ্রহণ তাদের পলিটিক্যাল ওয়েটেজ অনুযায়ী ডিসাইডেড হবে।
তিনি আরও বলেন যে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে পরিস্থিতি ‘একদমই স্থিতিশীল’ আছে এবং সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলার পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলও এখন সে লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। তিনি মনে করেন না যে, এই বিষয়ে আর কোনো 'প্রশ্নবোধক চিহ্ন তোলার সুযোগ বা অবকাশ' আছে।
গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, এটি বিচারের গতিতে চলছে এবং আশা করছেন নির্বাচনের আগে কিছু বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে।
তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই চাই যে সুবিচার নিশ্চিত হোক, সেজন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঐকমত্য হয়নি কথাটা তো ঠিক না। ঐকমত্য তো হয়েছে। অনেক বড় বড় বিষয় ঐকমত্য হয়েছে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, যেসব বিষয়ে সংস্কারকেন্দ্রিক ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন কেমন করে হবে তা নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে এবং মোটামুটি বিভিন্ন অপশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক আলোচনায় উত্তাপ থাকবে, মত-ভিন্নতা থাকবে, কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি মনে করেন, সকলে একমত হয়ে যতটুকু করতে চাইবে, সরকার সেটুকুই সংস্কারের ঐকমত্য এবং পদ্ধতির ঐকমত্যের দিকে যাবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, তাদের ক্যালেন্ডারে তারা এখনও কোথাও ব্যর্থ (ফেইল) হননি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি