এবার জেন জি বিক্ষোভে উত্তাল মরক্কো, পুলিশের গুলিতে নিহত ২
ছবি: সংগৃহীত
উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে তরুণ প্রজন্ম বা জেন জি-দের নেতৃত্বে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে।
বুধবার (১ অক্টোবর) দেশটির উপকূলীয় শহর আগাদিরের লাকলিয়া এলাকায় পুলিশের গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, সেদিন লাকলিয়ার একটি পুলিশ স্টেশনে একদল বিক্ষোভকারী হামলা চালায়। উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্র লুটপাট। হামলা প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি ও টিয়ারশেল ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, অনেক বিক্ষোভকারীর হাতে ছুরি থাকলেও পুলিশের ধারাবাহিক গুলি ও টিয়ারশেলের কারণে তারা তা ব্যবহার করতে পারেননি। তবে তারা থানার ভেতরে অগ্নিসংযোগ করে এবং পুলিশের বেশ কয়েকটি যানবাহন পুড়িয়ে দেয়।
একই দিন আগাদিরের বিয়ৌগ্রা এলাকায় একটি ব্যাংক ও কয়েকটি দোকানে লুটপাট চালায় বিক্ষোভকারীরা। আবদেস্লাম চেগ্রি নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানান, “আমি ক্যাফেতে বসে পিএসজি বনাম রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচ দেখছিলাম। হঠাৎ দেখি কয়েকজন তরুণ পাশের একটি দোকানে পাথর ছুড়ছে। এরপর তাদের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখি।”
এছাড়া পর্যটন শহর মারাকেশে একটি পুলিশ স্টেশনে আগুন দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকটি ভবন ও দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতভর সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৬৩ সদস্য এবং অন্তত ২৩ জন সাধারণ নাগরিক আহত হয়েছেন। সারাদেশে ৪০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সহিংসতায় ১৪২টি নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ি এবং অন্তত ২০টি ব্যক্তিগত গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেন জি আন্দোলনকারীরা ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের অবসান, দুর্নীতি দমন এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের দাবি জানাচ্ছেন। মরক্কোতে বর্তমানে বেকারত্বের হার ১২ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ক্রমেই বাড়ছে। তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন: জেন-জির আন্দোলনে মাদাগাস্কারে সরকার পতন
তরুণ-তরুণীদের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে তুলনামূলকভাবে অখ্যাত ও অনলাইনভিত্তিক সংগঠন ‘জেন-জি ২১২’। শুরুতে এই সংগঠনের সদস্য ছিল মাত্র ৩ হাজার। কিন্তু গত চার দিনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজারে। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ডিসকর্ড ও গেমিং অ্যাপের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থেকে তারা তরুণদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
এ আন্দোলন শুরু হয় গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী রাবাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে। তবে কয়েক দিনের ব্যবধানে তা সহিংস রূপ নিয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের বিরোধ সরকারের নীতির সঙ্গে, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে নয়। এক বিবৃতিতে তারা সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকার ২০৩০ সালের বিশ্বকাপ ও চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিতব্য আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের জন্য বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে, অথচ হাসপাতাল ও শিক্ষা খাতের অবস্থা করুণ রয়ে গেছে। আন্দোলনে তাই শ্লোগান উঠেছে— “স্টেডিয়াম আছে, হাসপাতাল কোথায়?”
বিক্ষোভকারীরা মরক্কোর প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখান্নৌচের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তাদের মতে, সরকার অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান ও মৌলিক সেবার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
সহিংস বিক্ষোভ মূলত দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ। দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী ক্যাসাব্লাঙ্কা, উত্তরাঞ্চলীয় ওউজদা ও তাজা শহরে এখনও কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক মাধ্যমে সংগঠনের দ্রুত সম্প্রসারণে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন।
মরক্কো দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে গেলেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আগামী ২০২৬ সালে দেশটিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর আগে এই তরুণ-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন দেশটির গভীর সামাজিক অস্থিরতা ও বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








