ইসরায়েলি বিমান হামলায় কাঁপলো দোহা

ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়ে প্রথমবারের মতো কাতারের রাজধানী দোহায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দোহা শহরের কাটারা জেলায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে শহরটি।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেট যৌথভাবে হামাসের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আইডিএফ।
আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানায়, ৭ অক্টোবরের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী হামাস নেতাদের সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।
তারা আরও দাবি করে, বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ‘সুনির্দিষ্ট অস্ত্রশস্ত্র ও অতিরিক্ত গোয়েন্দা তথ্য’ ব্যবহার করা হয়েছে।
হামলার সময় দোহায় একটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর শীর্ষ নেতারা, যার মধ্যে খালিল আল-হাইয়া, খালেদ মাশাল, জাহের জাবারিন এবং নিজার আওয়াদাল্লাহ রয়েছেন।
আল-আরাবিয়া ও আল-জাজিরার সূত্র অনুযায়ী, এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছিল।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. মাজেদ আল আনসারি এই হামলাকে “আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির চরম লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছেন।
আরও পড়ুন: জেরুজালেমে বাসে সশস্ত্র হামলা, ৫ নিহত
তিনি বলেন, হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্যদের আবাসিক ভবনে চালানো এই হামলা কাতারের নাগরিক ও বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের এই বেপরোয়া আচরণ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। কাতারের সার্বভৌমত্বকে লক্ষ্য করে চালানো যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কাতার রুখে দাঁড়াবে। কাতার সরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
এই হামলা কাতারের মতো নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্রে চালানো প্রথম ইসরায়েলি অভিযান, যা মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক পরিবেশে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। কাতার দীর্ঘদিন ধরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা শুধু একটি সামরিক অভিযান নয়, বরং এটি “সংলাপের সম্ভাবনার ওপর সরাসরি আঘাত”।
দোহায় বিস্ফোরণের পর শহরের কাটারা জেলায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। রাস্তায় জরুরি সেবা বাহিনী ছুটে যায়, এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামাসের পক্ষ থেকেও হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং তারা জানিয়েছে, তাদের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো হামলার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর—যেমন মিসর, তুরস্ক—প্রতিক্রিয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি