News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ২৮ আগস্ট ২০২৫

গাজা ইস্যুতে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে ট্রাম্প-ব্লেয়ার

গাজা ইস্যুতে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে ট্রাম্প-ব্লেয়ার

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। এই উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনা এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে এবং মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে, এই বৈঠকে গাজা যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের জামাতা এবং সাবেক সিনিয়র উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারও।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের দিনগুলো নিয়ে একটি “খুব বিস্তৃত” পরিকল্পনা তৈরি করছে। তবে এই পরিকল্পনার বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করা হয়নি। 
উইটকফ ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি আশা করছেন গাজার যুদ্ধ আগামী চার মাসের মধ্যে, অর্থাৎ চলতি বছরের মধ্যেই শেষ হবে। 

তিনি আরও বলেন, এই পরিকল্পনাটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মানবিক অভিপ্রায়কে প্রতিফলিত করবে। 

হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি দেখতে চান।

তবে, ট্রাম্পের পূর্ববর্তী কিছু মন্তব্য এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, গাজার মানুষকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা যেতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র ওই ভূখণ্ডকে “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা” হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল।

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুকধারীর হামলা, দুই শিশুসহ নিহত ৩

বৈঠকের আলোচনায় যখন গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব আসছে, তখন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সাআর সাংবাদিকদের পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। ব্লেয়ার তার মধ্যপ্রাচ্য দূত থাকাকালীন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দিলেও ইসরায়েলের এই কঠোর অবস্থান শান্তি প্রক্রিয়ার পথকে আরও জটিল করে তুলছে।

এই কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যেই গাজা সিটিতে মানবিক পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনিদের গাজা সিটি খালি করার জন্য সতর্ক করেছে, যা তারা “অনিবার্য” বলে উল্লেখ করেছে। ইসরায়েলি ট্যাংক শহরে প্রবেশ করে বাড়িঘর ধ্বংস করছে, যার ফলে হাজার হাজার বাসিন্দা পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করেছে যে, গাজা সিটিতে সামরিক অভিযান একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে সেখানে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে, গাজা সিটিতে বর্তমানে দুর্ভিক্ষ চলছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা (যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া) এক যৌথ বিবৃতিতে গাজার দুর্ভিক্ষকে “মানুষ সৃষ্ট সংকট” আখ্যা দিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে মানবিক সহায়তার ওপর থেকে সব ধরনের বাধা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। 

বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ‘ক্ষুধাকে’ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ বলেও উল্লেখ করা হয়।

টানা দুই বছরের ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার ৯০ শতাংশেরও বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য, পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। গাজার জনসংখ্যার বেশিরভাগই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্লেয়ার-ট্রাম্পের বৈঠক মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন জল্পনা তৈরি করেছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়