News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ৮ আগস্ট ২০২৫

দারফুরে আমিরাতের বিমানে সুদানের বোমা হামলা, নিহত ৪০

দারফুরে আমিরাতের বিমানে সুদানের বোমা হামলা, নিহত ৪০

ছবি: সংগৃহীত

সুদানের দারফুর অঞ্চলের নিয়ালা বিমানবন্দরে অবতরণের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে আসা একটি বিমানে বোমা হামলা চালিয়েছে সুদানের সেনাবাহিনী। 

কলম্বিয়ান ভাড়াটে যোদ্ধা ও সামরিক সরঞ্জাম বহনকারী বিমানটি র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অবতরণ করছিল। 
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, বুধবার (৬ আগস্ট) গভীর রাতে চালানো এ হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন।

সুদানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, বিমানটি উপসাগরীয় একটি ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে আরএসএফের জন্য বিদেশি যোদ্ধা ও উন্নত সামরিক সরঞ্জাম বহন করছিল। বিমানটি দারফুরের নিয়ালা বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বোমা হামলা চালিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়।

এক সামরিক সূত্র এএফপি-কে জানায়, বিমানটির লক্ষ্য ছিল আরএসএফের সামরিক অভিযানে সহায়তা। বিমানে বেশিরভাগই ছিলেন কলম্বিয়ান ভাড়াটে সৈন্য, যারা ২০২৪ সালের শেষ থেকে দারফুর অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছেন। জাতিসংঘের একাধিক বিশেষজ্ঞ দলও দারফুরে কলম্বিয়ান যোদ্ধাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে।

আরএসএফের সঙ্গে গোপন সামরিক সহযোগিতার অভিযোগ করে আসছে। 

বিশেষত, ইউএই-র বিরুদ্ধে নিয়ালা বিমানবন্দর হয়ে চীনা নির্মিত দূরপাল্লার ড্রোন এবং অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ সামনে এসেছে। 
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, নিয়ালায় একাধিক চীনা ড্রোনের উপস্থিতি ধরা পড়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সুদানের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। 

তারা দাবি করেছে, এমন কোনো বিমান ধ্বংস হয়নি এবং বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী ছড়িয়েছে।

এক উচ্চপদস্থ আমিরাতি কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, সুদান সরকার একটি ভুয়া তথ্য প্রচার করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে চাইছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন: কেনিয়ায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বিধ্বস্ত, নিহত ৬

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো এক্স-এ পোস্ট করে জানান, সরকার বিমান হামলায় কতজন কলম্বিয়ান নাগরিক নিহত হয়েছেন, তা খতিয়ে দেখছে। 

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করব মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে।

দারফুর নিয়ন্ত্রণকারী আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এই হামলার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

তবে এর আগে ইউএই থেকে প্রাপ্ত সামরিক সহায়তা নিয়ে তারা কখনও সরাসরি মন্তব্য করেনি, যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে বিদেশি যোদ্ধা ও উন্নত অস্ত্র ব্যবহারের একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী এবং আরএসএফ-এর মধ্যে। এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

সুদানের সরকার সোমবার (৪ আগস্ট) ইউএই-কে কলম্বিয়ান ভাড়াটে সৈন্য নিয়োগ ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে আরএসএফকে সমর্থন করার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তোলে এবং দাবি করে যে তাদের কাছে এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

এই অভিযোগ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষত আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ সংঘাতে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর অপ্রকাশ্য হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে।

সুদানের সেনাবাহিনী, আরএসএফ এবং বিদেশি শক্তিগুলোর জটিল সংঘাতে দারফুর আরও একটি বিপজ্জনক মোড়ে প্রবেশ করেছে। কলম্বিয়ান ভাড়াটে সৈন্য, উপসাগরীয় সামরিক ঘাঁটি, এবং উন্নত অস্ত্র প্রযুক্তি এই সংঘর্ষকে আরও আন্তর্জাতিক রূপ দিতে পারে।

এই ঘটনায় যেমন উপসাগরীয় সহযোগিতার প্রভাব, তেমনি আন্তর্জাতিক ভাড়াটে যুদ্ধনীতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ঘটনাটির স্বাধীন তদন্ত ও জাতিসংঘ পর্যায়ে আলোচনার দাবি উঠছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকেও।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়