ত্রাণ নিতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল গাজার শিশুরা

ছবি: সংগৃহীত
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বিমান, ড্রোন ও স্থল হামলায় পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি অভিযানে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৩৮ জন ফিলিস্তিনি। আহতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে।
এর পাশাপাশি, ত্রাণ নিতে গিয়ে পদদলিত ও দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আরও অন্তত ২৫ জন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়েছেন। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে বুধবার একটি ত্রাণবাহী ট্রাক উল্টে মারা গেছেন অন্তত ২৫ জন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
আনাদোলু এজেন্সি ও বিবিসি জানায়, সেনাবাহিনীর চাপে ট্রাকটি ঝুঁকিপূর্ণ পথে যেতে বাধ্য হলে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। একইদিন মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে এক এয়ারস্ট্রাইকে একটি পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিহত এবং ২০ জন আহত হন। গাজা শহরে ড্রোন হামলায় ছয় মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলি অবরোধে সৃষ্ট খাদ্য সংকটে গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে মারা গেছেন আরও পাঁচজন, যাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। চলমান দুর্ভিক্ষে এ পর্যন্ত অনাহার ও পুষ্টিহীনতায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯৩ জনে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা উন্মোচন করেছেন। দেশটির নিরাপত্তা ক্যাবিনেটে এ বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, গাজা অভিযান বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সেনাবাহিনী। তবে এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ, যিনি একে “চরম ভুল” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আরও পড়ুন: ভারতীয় পণ্যে ট্রাম্পের দ্বিগুণ শুল্কে ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি
ইসরায়েল ইতোমধ্যেই গাজার প্রায় ৮৬ শতাংশ এলাকায় সামরিক দখল প্রতিষ্ঠা করেছে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে সীমিত এলাকায় গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। অবশিষ্ট এলাকাগুলোতেও সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনায় তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকা এই পরিকল্পনাকে “গভীরভাবে উদ্বেগজনক” বলে উল্লেখ করেছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট তেরেজা রিবেরা একে “অগ্রহণযোগ্য উসকানি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। গাজা দখল ও চলমান যুদ্ধের প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তিনি “গাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা” নিয়ে বেশি মনোযোগী। নেতানিয়াহুর দখল পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, “বাকিটা ইসরায়েলের বিষয়।”
গাজা সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৮৪৩টি ত্রাণ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে, যেখানে প্রতিদিন প্রয়োজন প্রায় ৬ হাজার।
মিশরের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গত দুই সপ্তাহে প্রায় ১ হাজার ট্রাক প্রবেশ করেছে, কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য।
যুক্তরাষ্ট্র-চালিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে গত ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত ১,৫৬৮ জন নিহত এবং ১১,২৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পরিসংখ্যান বিভাগ।
জিএইচএফ দাবি করছে, তাদের মূল কেন্দ্রের ভেতরে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস একে বিভ্রান্তিকর বলছে।
জাতিসংঘ অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ত্রাণদানে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে দুর্ভিক্ষ ও বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিচ্ছে। বোমা পড়া অনুন্নত রাস্তায় ত্রাণ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের, যার ফলে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত ৬১ হাজার ১০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পুরো গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং বর্তমানে তা দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়ের সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি