News Bangladesh

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:২১, ৭ আগস্ট ২০২৫

এআই’র দাপটে চাকরি হারানোর আশঙ্কায় তরুণ প্রজন্ম

এআই’র দাপটে চাকরি হারানোর আশঙ্কায় তরুণ প্রজন্ম

ছবি: নিউজবাংলাদেশ

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার বর্তমানে বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের চিত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে সাদা-কলার চাকরির বাজারে, যেখানে স্বয়ংক্রিয়তা ও অ্যালগরিদম-চালিত সেবা মানুষের বিকল্প হয়ে উঠছে। এই পরিবর্তনের সর্বাধিক প্রভাব পড়েছে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিগুলোর ওপর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ও পরিসংখ্যানে গভীর সংকেত মিলছে।

গোল্ডম্যান শ্যাক্সের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে—যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থানের হার ২০২২ সালের নভেম্বরের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ঐ সময়েই বাজারে আসে ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি, যা এআই প্রযুক্তির গণমাধ্যমে বিস্তারের সূচনাবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত হয়। তখন প্রযুক্তি খাতের কর্মসংস্থান ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কিন্তু ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে ছবিটা পুরোপুরি বদলে যায়।

২০২৪ সালের শুরু থেকে ২০-৩০ বছর বয়সী তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে বেকারত্ব প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গড় বেকারত্বের (প্রায় ০.৭ শতাংশ) তুলনায় চারগুণেরও বেশি। এটি মূলত প্রমাণ করে যে, এআই এখন প্রাথমিক স্তরের সাদা-কলার চাকরি যেমন কনটেন্ট লেখক, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি ও প্রশাসনিক সহকারী পদের ওপর সরাসরি প্রতিস্থাপনের প্রভাব ফেলছে।

গোল্ডম্যান শ্যাক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ জ্যান হ্যাটজিয়াস পূর্বাভাস দিয়েছেন, আগামী দশকে এআই প্রযুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৬ থেকে ৭ শতাংশ চাকরি পুরোপুরি বিলুপ্ত হতে পারে। 

যদিও তিনি আশ্বস্ত করেছেন, এই পরিবর্তনের ফলে সামগ্রিক বেকারত্বের হার বড়জোর ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে, এবং অনেকেই অন্যান্য খাতে স্থানান্তরিত হতে পারবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়বস্তু নির্মাণ, গ্রাহক সেবা, প্রশাসন, অ্যাকাউন্টস এবং মানবসম্পদ বিভাগে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে এআই’র প্রতিস্থাপন ঘটছে। একাধিক বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এই বিভাগগুলোতে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে।

অ্যানথ্রপিকের সিইও দারিও আমোদেই এবং অ্যামাজনের সিইও অ্যান্ডি জ্যাসি সম্প্রতি একাধিক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, আগামী কয়েক বছরে এআই এমন অনেক পেশায় মানুষের স্থান দখল করবে যা আগে “নিরাপদ” বলে বিবেচিত হতো। 

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিকল্পনা অ্যাপলের

তাদের মতে, যারা সৃজনশীলতা ও কৌশলগত বিশ্লেষণের বাইরে সাধারণ প্রক্রিয়াভিত্তিক কাজ করেন, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

তবে সব আশংকা সত্ত্বেও প্রযুক্তি খাতের কিছু অংশ এখনো ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন। বিশেষ করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও এআই উন্নয়ন খাতে। মেটার মতো প্রতিষ্ঠান এখনো মিলিয়ন ডলারের বেতন প্যাকেজে দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিচ্ছে।

পেশাগত সামাজিক প্ল্যাটফর্ম লিঙ্কডইন জানিয়েছে, “AI Engineer” এখন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা পেশাগুলোর শীর্ষে রয়েছে। এর পরেই আছে Data Center Technician ও System Engineer পদের চাহিদা।

এই পরিবর্তন বোঝাতে গিয়ে সিলিকন ভ্যালির চাকরি বিশ্লেষক মার্ক ওলসন বলেন, যেসব চাকরি ‘রুটিন’ এবং নির্ধারিত কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ, সেগুলো সবচেয়ে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। তবে উদ্ভাবন, অ্যালগরিদম নকশা, নিরাপত্তা প্রকৌশল—এসব খাতে দক্ষদের জন্য ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

অন্যদিকে, এআই বিপ্লবের ছায়ায় ভারতের চিত্র এখনো তুলনামূলক ভিন্ন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারতে এখনো এআই প্রযুক্তির কারণে চাকরি হারানোর ঘটনা ব্যাপক আকারে দেখা যাচ্ছে না। বরং আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ভারতের বাজারে তাদের উপস্থিতি আরও জোরদার করছে।

বিশেষত বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ ও পুনের মতো শহরে নতুন গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (GCC) খুলছে গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন ও ওরাকল। এতে করে হাজার হাজার নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে এআই ট্রেইনিং, ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেটা অ্যানালিটিকস, এবং সফটওয়্যার টেস্টিং সংক্রান্ত কাজ।

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আল্পনা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, যদিও বিশ্বজুড়ে এআই প্রতিস্থাপন উদ্বেগ সৃষ্টি করছে, কিন্তু ভারতে আমরা এখনো কর্মসংস্থান বাড়াতে পারছি কারণ আন্তর্জাতিক বাজার এখানকার দক্ষতা ও খরচ-সাশ্রয়ী প্রোফাইলকে কাজে লাগাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে মানুষকে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ ক্ষমতা, সৃজনশীল চিন্তাভাবনা, এবং উচ্চ সংবেদনশীল মানবিক দক্ষতা (EQ)।

প্রযুক্তি বিশ্লেষক এবং লেখক জন হার্লো বলেন, এআই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং একটি শক্তিশালী সহযোদ্ধা—যারা নিজেকে এর সাথে মানিয়ে নিতে পারবে, তারা ভবিষ্যতের বিজয়ী।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়