সিম সীমা ১০: নভেম্বরের মধ্যে ৬৭ লাখ সিম বন্ধের পরিকল্পনা

ফাইল ছবি
একজন ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০টি মোবাইল সিম রাখার সীমা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব ব্যবহারকারীর নামে ১০টির বেশি সিম নিবন্ধিত রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত সিম ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তবে তার আগে নিজেদের অপ্রয়োজনীয় সিম বাতিল করার সুযোগ পাবেন গ্রাহকরা। পুরো প্রক্রিয়াটি ২০২৫ সালের নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিটিআরসি এ সিদ্ধান্ত নেয় ২০২৫ সালের মে মাসে। তখন কমিশন জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মোবাইল অপারেটরদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা রোধ এবং আন্তর্জাতিক অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছে এবং বিটিআরসির ২৯৬তম কমিশন সভায় এর বাস্তবায়ন পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়।
বিটিআরসির তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত প্রকৃত মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৫। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ ব্যবহারকারীর নামে ৫টি বা তার কম সিম রয়েছে। ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যবহারকারীর নামে ৬ থেকে ১০টি সিম এবং মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ ব্যবহারকারীর নামে রয়েছে ১১টির বেশি সিম। সর্বোচ্চ ১০টি সিমের সীমা কার্যকর হলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের মোট ৬৭ লাখ সিম বন্ধ হয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিটিআরসি।
এরই অংশ হিসেবে আগামী ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে তিন মাস সময় পাবেন গ্রাহকরা, যাতে তারা নিজেরা ১০টির বেশি সিম থাকলে তা ‘ট্রান্সফার অব ওনারশিপ’ অথবা স্বেচ্ছায় সিম বাতিলের মাধ্যমে কমিয়ে আনতে পারেন। এ সময়ের মধ্যে যারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন না, তাদের অতিরিক্ত সিমগুলো ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে ধাপে ধাপে নিষ্ক্রিয় বা বাতিল করা হবে।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় তরুণরাই মূল শক্তি: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
ব্যবহারকারীদের তালিকা তৈরির জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিটিআরসির নিয়ন্ত্রিত সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্মের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানকে। তারা সেন্ট্রাল ডেটাবেইস বিশ্লেষণ করে ১০টির বেশি সিমধারী ব্যবহারকারীদের একটি তালিকা তৈরি করবে। এরপর এই তালিকা মোবাইল অপারেটরদের কাছে পাঠানো হবে।
অপারেটররা তালিকা অনুযায়ী গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। এসএমএসের মাধ্যমে গ্রাহকদের জানানো হবে তাঁদের নামে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা এবং তা ১০টিতে নামিয়ে আনার অনুরোধ জানানো হবে।
একইসঙ্গে অপারেটরদের ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট তালিকা প্রকাশ ও বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে। বিটিআরসি নিজেও প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করবে।
ব্যবহারকারীরা *১৬০০১# নম্বরে ডায়াল করে জানতে পারবেন তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে কতটি সিম নিবন্ধিত রয়েছে এবং সেগুলোর নম্বর কী কী। বাড়তি সিমের মালিকানা অন্য কারও নামে হস্তান্তরের সুযোগও থাকছে।
বিটিআরসির পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, সিম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অপারেটররা ব্যবহারকারীর সর্বশেষ ছয় মাসের সিম ব্যবহারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করবে। যেসব সিম থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে ১০টি সিম চূড়ান্ত করা হবে। কম ব্যবহৃত, অপ্রয়োজনীয় বা অনিয়মিত সিমগুলো শেষে রাখা হবে এবং সেগুলোই বাতিলের জন্য চিহ্নিত হবে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সঙ্গে সংযুক্ত সিম, জরুরি ও কার্যকর সিমগুলোকে তালিকায় রক্ষা করার চেষ্টা করা হবে।
এছাড়া বিটিআরসি নির্দেশ দিয়েছে, এক ব্যবহারকারীর বিভিন্ন অপারেটরে থাকা সিমের মধ্যে যেন অন্তত একটি করে সিম টিকে থাকে। প্রয়োজনে অপারেটরদের বিশেষভাবে পছন্দের দুটি সিম রাখার সুযোগ দেওয়া হবে। অপারেটরদের চূড়ান্ত তালিকার ভিত্তিতে ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান ১০টি সিম নির্ধারণ করে বাকি সিমগুলোর নিবন্ধন বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
মূলত ১৫ অক্টোবরের মধ্যে তালিকা প্রস্তুত ও প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও বিটিআরসির সর্বশেষ সূত্র মতে, তা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। এরপরও যেসব ব্যবহারকারীর নামে অতিরিক্ত সিম থাকবে, তাদের নতুন করে তালিকাভুক্ত করে অপারেটরদের জানানো হবে। প্রতি ব্যবহারকারীর জন্য পৃথক তালিকা তৈরি করে সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদানকারী সিমগুলো বাছাই করা হবে।
সবশেষে বিটিআরসি জানিয়েছে, অতিরিক্ত সিম বন্ধের এই প্রক্রিয়ায় যদি কোনো প্রয়োজনীয় সিম অনিচ্ছাকৃতভাবে বাতিল হয়ে যায়, তাহলে গ্রাহক তার সংশ্লিষ্ট অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেটি পুনরায় নিবন্ধন করে নিতে পারবেন। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে শেষ করতে বিটিআরসি ৫ থেকে ৬ মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশের মোবাইল সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, জালিয়াতি প্রতিরোধ, এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা জোরদার হবে বলে মনে করছে বিটিআরসি। পাশাপাশি অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও আরও সুষ্ঠু ও নিয়ন্ত্রিত হবে বলে আশাবাদ সংস্থাটির।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি