News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ৭ আগস্ট ২০২৫

১২ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের ১২ সাফল্য

১২ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের ১২ সাফল্য

ফাইল ছবি

আগামীকাল (৮ আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর পূর্ণ করবে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বৃহত্তর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকারের পতনের পর তিনদিনের মধ্যে গঠিত হয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার। 

এই এক বছরে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও সরকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। 

প্রধান উপদেষ্টা দপ্তরের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সরকারের ১২টি সফলতার বিষয় তুলে ধরেন। 

১. শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা
জুলাই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিরাজমান নৈরাজ্য ও সহিংসতা থেমে গেছে। সরকার কার্যকর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিশোধ ও বিশৃঙ্খলার চক্র ভেঙে দিয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নৈতিক নেতৃত্ব এই স্থিতিশীলতার মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে, যার কারণে জাতি সহিংসতার বদলে পুনর্মিলন ও গণতন্ত্রের পথে এগিয়েছে।

২. অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় থাকলেও এক বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধার হয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে প্রায় অর্ধেকে। সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৮.৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ৩৫ মাসে সর্বনিম্ন। রেমিট্যান্স আয় রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ শতাংশ, যা দেশের অর্থনীতিতে প্রাণ ফুঁে দিয়েছে। দীর্ঘদিন পর টাকার মান ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে। ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতাও পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।

৩. বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অভূতপূর্ব অগ্রগতি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনা সফল সমাপ্তি ঘটেছে, যা পূর্বে অনেকে অসম্ভব মনে করেছিল। বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ দ্বিগুণ হয়েছে, যেখানে উল্লেখযোগ্য হল হানদা গ্রুপের ২৫ কোটি ডলারের টেক্সটাইল খাত বিনিয়োগ, যা প্রায় ২৫,০০০ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। চীনের বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে ব্যাপক আগ্রহ প্রদর্শন করছেন। এফডিআই প্রবাহ গত সরকারের তুলনায় দ্বিগুণ।

৪. গণতান্ত্রিক সংস্কার ও ‘জুলাই সনদ’
সরকার ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার পাশাপাশি একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্রের পুনরুদ্ধার রোধে কাঠামোগত জবাবদিহি নিশ্চিত করবে এবং গণতন্ত্রের নতুন যুগের সূচনা করবে।

৫. ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চারটি বড় মামলা আদালতে বিচারাধীন। উল্লেখযোগ্যভাবে, শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়টিও এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা দেশের বিচারব্যবস্থায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

৬. নির্বাচন পরিকল্পনা ও সংস্কার
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রবাসী ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নাগরিক মতামত সংগ্রহ এবং নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনসার, পুলিশ ও সেনা সদস্যসহ প্রায় ৮ লাখ জনবল মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচন চেয়ে ইসিকে প্রধান উপদেষ্টার চিঠি

৭. প্রতিষ্ঠানিক ও আইনি সংস্কার
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। পুলিশ বিভাগে মানবাধিকার সেল গঠন, বডিক্যাম ব্যবহার, স্বচ্ছ জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ এবং জাতিসংঘ মানের প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণ প্রটোকল চালু করা হয়েছে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। গ্রেফতারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইনজীবী, চিকিৎসা সহায়তা ও অনলাইন জিডির সুযোগ চালু হয়েছে।

৮. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ইন্টারনেট অধিকার
দমনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হয়েছে। সব সাংবাদিক মামলার অবসান হয়েছে। সমালোচনার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা তথ্যপ্রবাহের স্বচ্ছতা ও গতি বৃদ্ধি করেছে।

৯. বহুমাত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি
সরকার একক দেশের ওপর নির্ভরতা থেকে বের হয়ে বহুমাত্রিক কূটনীতি গ্রহণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, চিকিৎসা সহায়তা ও সংকট মোকাবেলায় সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্ক পুনর্জাগরণ এবং আসিয়ান সদস্যপদ অর্জনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

১০. প্রবাসী ও শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা পুনরায় চালু করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেওয়া হচ্ছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা প্রদান করা হয়েছে। জাপানে ১ লাখ তরুণ পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও সার্বিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

১১. শহীদ ও আহত বিপ্লবীদের সহায়তা
জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ৭৭৫টি শহীদ পরিবারের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও ভাতা বিতরণ করা হয়েছে। ১৩ হাজার ৮০০ আহত বিপ্লবীর মাঝে ১৫৩ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহতদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

১২. সামুদ্রিক সম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়ন
বঙ্গোপসাগরকে ‘জলভিত্তিক অর্থনীতি’র মূল সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো হয়েছে, দৈনিক ২২৫ কনটেইনার অতিরিক্ত পরিচালিত হচ্ছে। উপকূলীয় উন্নয়ন প্রকল্প সম্প্রসারণ ও গভীর সমুদ্রের মৎস্য ও শিল্প প্রকল্পে বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ শুরু হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়