News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:১২, ৬ আগস্ট ২০২৫
আপডেট: ১৭:৩৮, ৬ আগস্ট ২০২৫

ভোট কেন্দ্রে থাকবে বডি ক্যামেরা, লটারিতে বদলি হবে এসপি-ওসি

ভোট কেন্দ্রে থাকবে বডি ক্যামেরা, লটারিতে বদলি হবে এসপি-ওসি

ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

বুধবার (৬ আগস্ট) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। 

তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় এবার নির্বাচনে কাজ করবে প্রায় ৮ লাখ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, যাদের প্রশিক্ষণ ও মোতায়েন পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে।

নির্বাচনের আগে সব জেলার ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসিদের বদলি করা হবে লটারির মাধ্যমে, যা হবে সচিবালয়ে গণমাধ্যমের সামনে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। 

উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রার্থীদের পক্ষপাত এড়াতে ডিসি-এসপিদের লটারির মাধ্যমে পোস্টিং করবো। এটা আগেই ঘোষণা করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে।

এছাড়া এসব কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই করে নির্বাচনকালে দায়িত্বে রাখা হবে কি না, সে সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনকে যৌথভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতে ব্যালট ভর্তি নিয়ে যাওয়া ও জাল ভোটের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবার ভোটের দিন সকালেই ব্যালট ও সরঞ্জাম পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এর আগের দিন নির্বাচন কমিশন থেকে জেলা ও উপজেলায় সরঞ্জাম পাঠানো হবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্রে থাকবে বডিওর্ন ক্যামেরা, যা থাকবে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের কাছে। পাশাপাশি সব কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।

গত ২৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, নির্বাচনে ৬০ হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সী তরুণ ভোটারদের জন্য পৃথক বুথ ও সহায়ক ব্যবস্থা এবং নারীদের জন্যও পৃথক বুথের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

আরও পড়ুন: দেশ চালাবে রাজনীতিবিদরাই, অন্তর্বর্তী সরকার নয়: আলী রীয়াজ

নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নতুন করে ১৯,২৯২ জন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হবে বিভিন্ন বাহিনীতে, যার মধ্যে থাকবে পুলিশে ১১,০০০, বিজিবিতে ৫,৫১৩, কোস্টগার্ডে ৬৩৪, আনসারে ২,১৪৫।

ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করে প্রশিক্ষণ শেষ করতে হবে। তাছাড়া নির্বাচনী দায়িত্বে ৮ লাখ সদস্যের প্রশিক্ষণ হবে, যার মধ্যে রয়েছে পুলিশ সদস্য ১,৪১,০০০, অঙ্গীভূত ও সাধারণ আনসার (অস্ত্রসহ) ৪৭,০০০, অস্ত্র ও লাঠিসহ আনসার-ভিডিপি ৪৭,০০০, লাঠিসহ আনসার-ভিডিপি ৪৭,০০০, গ্রাম পুলিশ ও দফাদার ৯৪,০০০।

নির্বাচনের সময় ১৫ দিন নির্দিষ্ট রুট ছাড়া সব যানবাহন যেমন ট্যাক্সি, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। একইসঙ্গে ৭ দিন সারাদেশে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে নির্বাচনী এলাকায়।

প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ২৫টি নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি গত ৩ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে চিঠি পাঠিয়েছেন। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও নির্বাচন কমিশনের জন্য ২,০৮০ কোটি টাকার বাজেট রাখা হয়েছে। এছাড়া অপ্রত্যাশিত ব্যয়ের খাতে রয়েছে আরও ২০,০০০ কোটি টাকা।

প্রত্যেক রিটার্নিং অফিসার তার নির্বাচনী এলাকায় একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সেল গঠন করবেন এবং নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে ইসিকে অবহিত করবেন। পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও অন্যান্য বাহিনীর মোতায়েন রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয়ে হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হবে ‘ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ নীতির আওতায়।

নির্বাচনের সময় প্রতিটি জেলায় মোবাইল কোর্ট টিম গঠন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সহিংসতা ঠেকানো হবে। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে, যাদের সঙ্গে থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক বিচার এবং দোষীদের ডোসিয়ারে তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। একইসঙ্গে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য একটি আচরণ ও নিরাপত্তা নির্দেশিকা (ম্যানুয়াল) প্রণয়ন করে সরবরাহ করা হবে।

নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরক ও সহিংস সামগ্রী উদ্ধারে সারাদেশে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর ১৫ দিনের মধ্যে বৈধ অস্ত্রের মালিকরাও অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন করতে পারবেন না, এমন নির্দেশনা জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে নিরপেক্ষ, সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যাপক প্রস্তুতি ও কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে যা যা প্রয়োজন, তার সবটুকু ব্যবস্থা ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। এখন অপেক্ষা শুধু নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়