News Bangladesh

বিনোদন ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৫৪, ৬ আগস্ট ২০২৫

বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলায় ফুঁসে উঠল টালিউড

বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলায় ফুঁসে উঠল টালিউড

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সরকারি চিঠিতে বলা হয়, আটককৃতদের নথিপত্র বিশ্লেষণের জন্য এমন একজন অনুবাদকের প্রয়োজন যিনি “বাংলাদেশি ভাষা”  পড়তে সক্ষম। এই বাক্যাংশে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে উল্লেখ করায় তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হয় প্রতিবাদের ঝড়। 

কলকাতার সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, ভাষা আন্দোলনের কর্মী এবং সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শোবিজ জগতের বহু বিশিষ্টজন কড়া ভাষায় এই ঘটনায় নিন্দা জানান।

ঘটনাটি সামনে আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। 

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম দিল্লি পুলিশের এই অবস্থানকে ‘বাঙালিদের সম্মানহানিকর’ এবং ‘প্রশাসনিক অজ্ঞতার পরিচায়ক’ বলে উল্লেখ করেন।

‘একুশে জুলাই’র সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়ে বলেন, বাংলা ভাষা আমাদের আত্মপরিচয়, তা অপমানিত হলে বাঙালি মাথা নিচু করে না।

এই বিতর্কে কলকাতার সংস্কৃতি জগৎ একজোট হয়ে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে। 

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে শাকিবের সঙ্গে ছবি নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন বুবলী

পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় দিল্লি পুলিশের ভাষা ব্যবহারে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে লিখেছেন, মূর্খের দল, এটাকে বাংলাদেশি ভাষা বলে না। একে বাংলা বলা হয়। যে ভাষায় আপনাদের জাতীয় সঙ্গীত লেখা, সেটাই তো বাংলা ভাষা।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলা ভারতের সংবিধানে স্বীকৃত ২২টি ভাষার অন্যতম।

পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র ও শিক্ষক ছিলেন। 

তিনি লেখেন, বাংলা ভাষা আমার প্রিয় বিষয় শুধু নয়, ৮ বছর শিক্ষকতা করেছি বাংলা ভাষার শিক্ষক হিসেবে। ‘বাংলাদেশি ভাষা’র ‘টেক্সট’ বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে জানতাম না। প্রশাসন যদি বাংলা বিষয়ে অস্বচ্ছ হয়, তাহলে সাহায্য নিক, না হলে নিজেদের অজ্ঞতা বারবার চিঠির মাধ্যমে সামনে আসবে।

অভিনেতা ও সমাজকর্মী পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ও একটি দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, উপভাষা আলাদা হতে পারে, কিন্তু ভাষাটা তো একটাই—আমাদের মাতৃভাষা, বাংলা। দেশভাগের পরে দুই বাংলা হয়েছে, ভাষা তো একটাই। পাঞ্জাবেও দেশভাগ হয়েছে, কিন্তু কেউ তো পাঞ্জাবিকে ‘পাকিস্তানি ভাষা’ বলে না!

তিনি উল্লেখ করেন, এই ভাষায় নোবেল এসেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলাম এই ভাষায় লিখেছেন। বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা মানেই ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে অপমান করা।

টলিউড সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাংলা ভাষা ছিল, আছে, থাকবে। তার জন্য লড়াই করতে হলে আমরা লড়ব।

এর আগেও এক সাংবাদিক সম্মেলনে ‘বাংলায় প্রশ্ন’ করলে হেসে ওঠা নিয়ে বিতর্কে জড়ানো প্রসেনজিৎ এবার সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, মাতৃভাষার জন্য যে কোনও লড়াইয়ে পাশে থাকবেন।

অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী লিখেছেন, বাংলা বিরোধী, বাঙালি বিরোধী, সংবিধান বিরোধী এই মনোভাব দেশের মৌলিক কাঠামোর ওপর আঘাত।

পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় নাম না করে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যকে আক্রমণ করে লেখেন, একটি ভাষা আছে, যেখানে তালব্য ‘শ’ দিয়ে একটি নিষ্পাপ পশু ও তার সন্তানাদির নাম শুরু হয়। কিন্তু সে ভাষায় মালব্য ‘শ’ এর কোন ব্যবহার নেই। দুর্ভাগ্যজনক!

অমিত শাহ, বিজেপি ও পাল্টা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
চিঠিতে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ উল্লেখ থাকার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে দিল্লি পুলিশ, যা সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক উদাসীনতা ও অবজ্ঞার অভিযোগ তুলেছে।

বিজেপির পক্ষ থেকে অবশ্য পাল্টা দাবি তোলা হয়েছে—বাংলা বলে কোনও ভাষাই নেই, এটা একটি আঞ্চলিক ভাষা, যেটি বাংলাদেশের সঙ্গে বেশি সম্পর্কিত।

এই মন্তব্যে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাংলায়। বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে স্বীকৃত ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা অন্যতম, এবং এই ভাষাতেই রচিত হয়েছে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত জন গণ মন।

এই বিতর্কের মাঝেই সামনে এসেছে আরও উদ্বেগজনক তথ্য—ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমান, গালিগালাজ ও এমনকি মারধরের শিকার হতে হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে কাজ করা শ্রমিকদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের অনেককে উদ্ধার করে ফিরিয়ে এনেছে রাজ্যে। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও কুণাল ঘোষ।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়