বিজয় দিবসে ৫৪ পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং
ফাইল ছবি
আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দেশজুড়ে ব্যাপক কর্মসূচির প্রস্তুতি চলছে। রাষ্ট্রীয় আয়োজনের পাশাপাশি এ বছর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হিসেবে থাকছে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বরেকর্ড গড়ার উদ্যোগ।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যৌথ ব্যবস্থাপনায় ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে স্কাইডাইভিং করবেন, যা বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুট জাম্প হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক সভায় বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভায় বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে সকল মন্ত্রণালয়ের নেওয়া ব্যাপক আকারের বিশেষ কর্মসূচি এবং সমন্বয় প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বিজয় দিবসের মূল অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে সকাল ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ফ্লাইপাস্ট মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি থাকবে বিশেষ ব্যান্ড-শো। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে “টিম বাংলাদেশ”-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে স্কাইডাইভিং করবেন, যা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। একইসঙ্গে দেশের অন্যান্য শহরেও সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ফ্লাইপাস্ট মহড়া আয়োজন করা হবে।
আরও পড়ুন: দেশে চাল মজুদ আছে সাড়ে ১৪ লাখ টন: খাদ্য উপদেষ্টা
এছাড়া পুলিশ বাহিনী, বিজিবি, আনসার বাহিনী সারাদেশে ব্যান্ড-শো ও বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করবে—সবগুলোই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত বছরের মতো এবারও সকল জেলা-উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয়মেলা আয়োজন করবে। শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আয়োজন করা হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৩টায় অ্যাক্রোবেটিক শো এবং সন্ধ্যা ৬টায় যাত্রাপালা ‘জেনারেল ওসমানী’ মঞ্চস্থ হবে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৩টা থেকে সেখানে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় দিবসের গান পরিবেশনা। একই সময়ে দেশের ৬৪ জেলায় নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন।
সভা শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, বিজয় দিবস বাংলাদেশের গৌরবময় ঐতিহাসিক দিন এবং এবারের আয়োজনে ধর্ম, বর্ণ, বয়স ও শ্রেণি নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, পুরো জাতি এবার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বৃহত্তর পরিসরে বিজয়ের উৎসবে শামিল হবে।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানেও স্বাধীনতা যুদ্ধের গান প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছিল, যা দেশের অস্তিত্বের প্রতি নতুন প্রজন্মের গভীর অঙ্গীকারকে নির্দেশ করে।
তিনি বলেন, এ বছর দেশব্যাপী বিজয় মেলা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাত্রাপালা ও কনসার্ট এবং পুরাতন বিমানবন্দরে এয়ার শো মিলিয়ে তরুণ প্রজন্ম এক স্মরণীয় বিজয় দিবসের অভিজ্ঞতা পাবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে তথ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। সরকারিভাবে নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী এদিন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও আলোকসজ্জা করা হবে। থাকবে একত্রিশবার তোপধ্বনি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ অনুষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা।
চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দরসহ ঢাকা সদরঘাট, পাগলা, বরিশাল এবং বিআইডাব্লিউটিসির বিভিন্ন ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। ঢাকাসহ সারাদেশের সিনেমা হলে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং মিলনায়তন ও উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি-বেসরকারি সব জাদুঘর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনা টিকিটে উন্মুক্ত থাকবে এবং দেশের সব বিনোদনকেন্দ্র শিশুদের জন্য সারাদিন বিনা টিকিটে প্রবেশের সুযোগ দেবে।
এছাড়া মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য কামনায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। দেশের হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র, ডে-কেয়ার ও শিশু বিকাশকেন্দ্র, শিশু পরিবার এবং ভবঘুরে পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ প্রীতিভোজের আয়োজন থাকবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








