ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ৭ সিদ্ধান্ত

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে কেন্দ্র করে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে চলমান বিতর্ক ও আন্দোলনের মধ্যে একাধিক সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতির তথ্য প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

১. অধ্যাদেশ প্রণয়ন প্রক্রিয়া 
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি—মানসম্মত শিক্ষা, সময়মতো পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ, প্রশাসনিক দক্ষতা—পূরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে।

২. মতামত গ্রহণ ও পর্যালোচনা 
গত ২৪ সেপ্টেম্বর খসড়া অধ্যাদেশটি বিভাগীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন মহল থেকে পাঁচ হাজারেরও বেশি মতামত পাওয়া গেছে। তিনটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের মতামতও সংগ্রহ করা হয়েছে। সব মতামত আইনগত ও বাস্তবতার নিরিখে যাচাই করে খসড়া পরিমার্জন চলছে। লক্ষ্য—২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পরিমার্জিত খসড়া উপস্থাপন।

৩. অন্তর্বর্তী প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় 
অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী প্রশাসন, সাত কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ১১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি, অন্তর্বর্তী প্রশাসন ও সাত কলেজের অধ্যক্ষদের অংশগ্রহণে ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বিষয়ে সভা হয়।

আরও পড়ুন: শিক্ষাভবন মোড় অবরোধ ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের, যান চলাচল বন্ধ

৪. ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন 
২৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা ইউনিটে ভর্তি আবেদন গ্রহণ করা হয়। মোট ১০ হাজার ১৯৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, যার মধ্যে ৯ হাজার ৩৮৮ জন ভর্তি নিশ্চিত করে। ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন ও পাঠদানের জন্য একটি অপারেশন ম্যানুয়েলও অনুমোদন করা হয়েছে।

৫. ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি 
ভর্তি সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। ৪ ডিসেম্বর অধ্যক্ষদের সঙ্গে এবং ৭ ডিসেম্বর শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা হয়। বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামোয় ক্লাস শুরু করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শীতকালীন ছুটি শেষে ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে ক্লাস শুরু হবে বলে শিক্ষক প্রতিনিধিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

৬. কাঠামো ও স্বাতন্ত্র রক্ষা 
অধ্যাদেশ পরিমার্জনে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদ সংরক্ষণ, কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য, নারী শিক্ষার সুযোগ সংকোচন না করা, নারীদের জন্য নির্ধারিত কলেজের বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখা, সম্পত্তির মালিকানা সংরক্ষণ এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না করার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সময়সাপেক্ষ এ প্রক্রিয়ায় ধৈর্য ও সহযোগিতা কামনা করেছে বিভাগ।

৭. ইতিবাচক একাডেমিক পরিবেশের লক্ষ্য 
শিক্ষা বিভাগ মনে করছে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অভিভাবকের ন্যায্য স্বার্থ রক্ষা এবং ইতিবাচক একাডেমিক পরিবেশ গড়ে তোলাই মূল লক্ষ্য। গুজব বা অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল আচরণ বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণ, ভর্তি সম্পন্ন, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি এবং কাঠামোগত নিশ্চয়তা—সবকিছুই ধাপে ধাপে এগোচ্ছে। লক্ষ্য, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে একটি কার্যকর ও মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।