News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

নির্বাচন স্থগিত চাওয়া রিট খারিজ করল হাইকোর্ট

নির্বাচন স্থগিত চাওয়া রিট খারিজ করল হাইকোর্ট

ফাইল ছবি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে দায়ের করা একটি রিট আবেদন হাইকোর্ট কর্তৃক ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ হয়ে গেছে। 

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ-এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। 

আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল—দেশ এখন নির্বাচনমুখী, তাই এই সময়ে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিট দায়ের করা গ্রহণযোগ্য নয়।

আইনজীবী মো. ইয়ারুল ইসলাম গত ৩ ডিসেম্বর দলের পক্ষে এই রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এই মামলার বিবাদী করা হয়।

শুনানির সময় হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটকারী আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, দেশের সব মানুষ এখন নির্বাচনমুখী। নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিট দায়ের করার এখন উপযোগী সময় নয়। এ ধরনের রিট এই সময়ে গ্রহণযোগ্য নয়।

আদালতের এই মনোভাব বুঝতে পেরে অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তিনি নিজেই রিট আবেদনটি ‘নট প্রেসড’ করে নিয়েছেন এবং মামলাটি আর চালাবেন না। তিনি নিশ্চিত করেন, আদালতও একই কারণে মেরিটে না গিয়ে রিটটি খারিজ করেছেন।

রিট আবেদনে মূলত সংবিধানের প্রতি ইঙ্গিত করে বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক (ডিসি)-কে রিটার্নিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। 

রিটকারীর দাবি ছিল, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

আরও পড়ুন: নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেলেন ফজলুর রহমান

রিটে যুক্তি দেওয়া হয়, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের এবং নির্বাহী বিভাগের কাজ কেবল সহযোগিতা করা। কিন্তু ডিসি ও ইউএনও-রা নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা ও সরকারের প্রতিনিধি হওয়ায়, তাদের হাতে নির্বাচনের দায়িত্ব তুলে দিলে নির্বাচন কমিশন কার্যত নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয় এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।

আইনজীবী ইয়ারুল ইসলাম তার আবেদনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার দাবি জোরালো করেন। 

তিনি বলেন, বিচার বিভাগের মতো নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাও সংবিধান প্রদত্ত। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে সচিব নিয়োগ দেওয়ায় এবং প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা কম থাকায় কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত হচ্ছে না।

এ কারণে, নির্বাচন কমিশনকে নিজস্ব দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল তৈরির জন্য জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সচিবসহ নিজস্ব লোকবল নিয়োগের জন্য একটি ‘ইলেকটোরাল সার্ভিস কমিশন’ গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল রিটে।

এইসব যুক্তির ভিত্তিতে রিটে হাইকোর্টের কাছে রুল চাওয়া হয়েছিল—কেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিসি-ইউএনও নিয়োগ না দিয়ে জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং কেন নির্বাহী বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশন সচিব নিয়োগ দেওয়াকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। 

একইসঙ্গে, রিট নিষ্পত্তির আগে পর্যন্ত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল।

রিটকারী আইনজীবী সাংবাদিকদের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে ডিসিদের আবারও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিলে তা ‘আরেকটি প্রভাবিত নির্বাচন’ হবে। তিনি নির্বাচন কমিশনের সচিবকে অপসারণ করে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়