বাগেরহাটের চার আসন পুনর্বহাল, ২৪ ঘণ্টায় গেজেট জারি নির্দেশ
ফাইল ছবি
বাগেরহাট জেলার চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল রেখে নির্বাচন কমিশনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট গেজেট জারি করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার নির্বাচন কমিশনের পূর্ববর্তী গেজেটকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি শশাঙ্গ শেখর সরকার ও বিচারপতি ফয়সাল হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায় ৬১ পৃষ্ঠার, যা রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
বাগেরহাটে দীর্ঘদিন ধরে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। ১৯৬৯ সাল থেকে এই চারটি আসন বহাল ছিল। তবে চলতি বছরের ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়।
রাজনৈতিক দল ও সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে। তারা হরতাল, অবরোধ, অবস্থান ও বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসেন। এর পরও নির্বাচন কমিশন ৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এতে চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করা হয়, যদিও মূলত সীমানা পরিবর্তনের মাধ্যমে বিন্যাস করা হয়েছে।
নতুন সীমানা অনুযায়ী বাগেরহাট-১: (সদর, চিতলমারী, মোল্লাহাট), (বাগেরহাট-২: ফকিরহাট, রামপাল, মোংলা), বাগেরহাট-৩: (কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা)।
আগের বিন্যাসে বাগেরহাট-১ ছিল চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট; বাগেরহাট-২ ছিল সদর-কচুয়া; বাগেরহাট-৩ ছিল রামপাল-মোংলা; এবং বাগেরহাট-৪ ছিল মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা।
আরও পড়ুন: জেড আই খান পান্নাকে জরুরি ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনালে তলব
বাগেরহাটে চারটি আসন পুনর্বহালের দাবিতে দুটি রিট হাইকোর্টে দায়ের করা হয়। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট বিপ্লব কুমার পোদ্দার, অ্যাডভোকেট ফয়সাল মোস্তফা, অ্যাডভোকেট রাজিয়া সুলতানা, ব্যারিস্টার কাজী সামান্তা এনাম, অ্যাডভোকেট আমিনুজ্জামান সোহাগ, অ্যাডভোকেট এনামুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান এবং অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইকরামুল কবির।
হাইকোর্ট ১৬ সেপ্টেম্বর রুল জারি করে, কেন বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল রাখতে নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং কেন চারটি থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করা গেজেট অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চায়। রুলের জবাব দিতে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে ১০ দিনের মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ১০ নভেম্বর হাইকোর্ট বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার নির্বাচন কমিশনের গেজেটকে অবৈধ ঘোষণা করে। একইসঙ্গে চারটি আসন পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেয়।
আজকের পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত সেই নির্দেশনা নিশ্চিত করে, নির্বাচন কমিশনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট গেজেট জারি করতে বলেছে।
ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, হাইকোর্টের এ নির্দেশ জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
এবারের রায়ে বাগেরহাট-৪ আসন পুনর্বহাল হবে, যা আগে কেটে গাজীপুর-৬ আসনে সংযোজিত হয়েছিল। এর ফলে গাজীপুর-৬ আসন বাতিল হবে।
বাগেরহাট প্রেসক্লাব, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, জেলা আইনজীবী সমিতি, সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য স্থানীয় সংগঠন রিটের পক্ষ নেওয়া সংস্থা। তারা নির্বাচন কমিশনের আসন পুনর্বিন্যাসকে “গণমানুষের দাবির উপেক্ষা” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলো সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি গঠন করে হরতাল, অবরোধ, অবস্থান ও বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। এখন হাইকোর্টের রায়ে তাদের দাবি পূরণ হওয়ায় রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।
১৯৬৯ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। এই আসনগুলো দেশের নির্বাচনী মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাইকোর্টের নির্দেশনার ফলে আসন সংখ্যা পুনর্বহাল হলে স্থানীয় প্রতিনিধি ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








