আপাতত লন্ডন যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া
ফাইল ছবি
শেষ মুহূর্তে বদলে গেছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। আপাতত তার চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল ৮টার নির্ধারিত অবতরণ–উড্ডয়ন সূচি অনুমোদন পাওয়ার পরও জার্মানিভিত্তিক এফএআই এভিয়েশন গ্রুপ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্লট প্রত্যাহারের আবেদন করেছে, যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ফলে মঙ্গলবার আপাতত বাতিল হচ্ছে তার লন্ডন যাত্রা।
রবিবার জমা দেওয়া অপারেটরের প্রাথমিক আবেদনের ভিত্তিতে বেবিচক মঙ্গলবার সকাল ৮টায় অবতরণ এবং রাত ৯টার দিকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে উড্ডয়নের অনুমতি দিয়েছিল। কাতার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জার্মানিভিত্তিক এফএআই এভিয়েশন গ্রুপের বোমবার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০৪ মডেলের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া নেওয়া হয়। দীর্ঘ দূরত্বের মেডিকেল ইভাকুয়েশনে ব্যবহৃত ট্রান্সকন্টিনেন্টাল সক্ষমতার এই বিজনেস জেট ঢাকা–লন্ডন ট্রান্সফারের জন্য উপযোগী।
তবে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বেবিচকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় এজেন্সির মাধ্যমে অপারেটর সংস্থা পূর্বে অনুমোদিত স্লট প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে। বেবিচক আবেদনটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এর ফলে মঙ্গলবারের নির্ধারিত গমন বাতিল হয়।
খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা শুধু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে নয়, বরং তার চিকিৎসার অবস্থান মূল্যায়নেও পরিবর্তন এসেছে।
শনিবারের ব্রিফিংয়ে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, শুক্রবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসতে না পারার ঘটনাটি সত্য হলেও, একই সময়ে বোর্ড সিদ্ধান্তে আসে—এ মুহূর্তে তার দীর্ঘসময় বিমান ভ্রমণের শারীরিক সক্ষমতা নেই। ফলে বিদেশ নেওয়ার পরিকল্পনা বিলম্বিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ীই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা পৌঁছাবে মঙ্গলবার
তিনি বলেন, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকলেও রোগীর সুচিকিৎসা ও নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ঢাকার চিকিৎসক দলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীন থেকে আগত বিদেশি বিশেষজ্ঞরাও অবস্থার প্রতিটি ধাপ মূল্যায়ন করছেন।
বেগম খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। ফুসফুসে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় ভর্তি হওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটে। ২৭ নভেম্বর তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি ও চোখের নানা জটিল রোগে ভুগছেন।
এভারকেয়ারের অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি–বিদেশি মেডিকেল বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এক ডজন চিকিৎসক তার চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
রবিবার মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, আগের তুলনায় তার অবস্থা কিছুটা ভালো—কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারে উন্নতি হয়েছে, সিটিস্ক্যান ও ইসিজির ফলও ভালো এসেছে। তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছুটা কথা বলার চেষ্টা করছেন।
লন্ডন থেকে শুক্রবার ঢাকায় এসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ও চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমান মেডিকেল বোর্ডে যোগ দেন। তিনি হাসপাতাল ও ধানমন্ডির বাসার মধ্যকার সময়টুকুতেও নিয়মিতভাবে শাশুড়ির চিকিৎসার আপডেট নিচ্ছেন।
পরিবারের ছোট ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী এবং দুই পুত্রবধূ হাসপাতালের সিসিইউতে সার্বক্ষণিক সঙ্গে রয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী জানান, মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিলে যে কোনো সময় কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করবে।
তার ভাষ্য, ম্যাডাম আগের তুলনায় ভালো সাড়া দিচ্ছেন। বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলে লন্ডনে পাঠানো হবে। হাসপাতালে কোন চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়া হবে, সেটিও পরে ঠিক করা হবে।
এর আগে বিএনপি জানিয়েছিল, জানুয়ারির মতো এবারও কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল; শুক্রবার সকালেই যাত্রার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সেটি বাতিল হয়। পরে শনিবার ও রবিবারও অ্যাম্বুলেন্সের আগমন অনিশ্চিত থাকে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








