ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, আস্থাই বড় চ্যালেঞ্জ: সিইসি

ছবি: সংগৃহীত
আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা জানান সিইসি।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার আশা করছেন তারা। তবে চিঠি না পেলেও কমিশন আগেই থেকেই পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সিইসি জানান, ভোট গ্রহণের তারিখ চূড়ান্ত হলে, সেই তারিখ থেকে দুই মাস আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে ইতোমধ্যেই অভ্যন্তরীণ আলোচনার মাধ্যমে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যদিও ওই সময় নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে, আমরা বহুদিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা রাতদিন খেটে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া, লজিস্টিক সরঞ্জামের ক্রয়সহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট প্রায় সব বড় প্রস্তুতিমূলক কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করব। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব।
তিনি আরও ঘোষণা দেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
আরও পড়ুন: বিগত তিন জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের তথ্য চাইল পিবিআই
সিইসি জানান, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী, আমরা বিশ্বাস করি দ্রুত সময়ের মধ্যে চিঠি পেয়ে যাব। না পেলেও আমাদের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে ভোটের সম্ভাব্য সময় নিয়ে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে।
ভোটারদের আস্থা ফেরানো এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা, কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অপব্যবহার রোধ করাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে আমাদের সামনে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, এবং আমরা আশা করি আগামী কয়েক মাসে আরও ভালো হবে।
তিনি বলেন, আমরা আয়নার মতো স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে চাই। যেন সব দলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়।
সিইসি নাসির উদ্দিন আরও জানান, কমিশন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে চায়।
তিনি বলেন, আমরা চাই, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এবং ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক।
ভবিষ্যৎ নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার প্রতিরোধও নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানান সিইসি। ডিজিটাল মাধ্যমের ভুল তথ্য ও প্রচারণা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের কথা জানান তিনি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়ন হচ্ছে এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে নির্বাচনের সময়কালের মধ্যে তা আরও স্থিতিশীল হবে। নির্বাচনের সময় নির্বিঘ্ন ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত চিঠি হাতে পাওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা ও তারিখ নির্ধারণে এগিয়ে যাবে। তবে তার আগেই নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, নির্বাচন সরঞ্জাম, আইনশৃঙ্খলা ও জনসংযোগসহ যাবতীয় পূর্বপ্রস্তুতি চূড়ান্ত করার পথে রয়েছে।
কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভাষায়, আমরা চাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার একটি উদাহরণ, যা হবে নতুন গণতান্ত্রিক অধ্যায়ের সূচনা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি