News Bangladesh

স্টাফ রিপোর্টার || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:৫৭, ৪ আগস্ট ২০২৫
আপডেট: ১৪:০০, ৪ আগস্ট ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানে প্রাণ হারান ৬ সংবাদকর্মী, নির্যাতিত হন অনেকে

জুলাই অভ্যুত্থানে প্রাণ হারান ৬ সংবাদকর্মী, নির্যাতিত হন অনেকে

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই অভ্যুত্থানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারান ৬ সংবাদকর্মী। এছাড়া তৎকালীন স্বৈরশাসকের নানা নির্যাতনের শিকার হন তারা। 

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, জুলাই আন্দোলনে রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি উত্তাল ছিল যাত্রাবাড়ী এলাকা। সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ১৮ জুলাই বিকালে গুলিতে প্রথম নিহত হন ঢাকা টাইমসের স্টাফ রিপোর্টার হাসান মেহেদী। একই দিন বিকালে উত্তরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দৈনিক ভোরের আওয়াজের প্রতিবেদক শাকিল হোসাইন নিহত হন। এছাড়া ১৯ জুলাই সিলেট শহরে দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি আবু তাহের মুহাম্মদ তুরাব নামে আরেক সাংবাদিক গুলিতে প্রাণ হারান। একই দিনে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ফ্রিল্যান্সার ফটোসাংবাদিক তাহির জামান প্রিয় গুলিতে নিহত হন।

এরপর ৪ আগস্ট  সিরাজগঞ্জে দৈনিক খবরপত্রের প্রতিবেদক সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিক গুলিতে প্রাণ হারান। সর্বশেষ ৫ আগস্ট সিলেটের হবিগঞ্জে বানিয়াচং থানার সামনে নিহত হন স্থানীয় সাংবাদিক হোসেন আখুঞ্জি।

কোনো মামলা বা অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও অভ্যুত্থানকালে গ্রেফতারের শিকার হন জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা প্রতিনিধি সাঈদ খান। 

আরও পড়ুন: ১১ মাসে সারাদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে ৭৬১টি মামলা, গ্রেফতার ৬১: টিআইবি

সে সময় তাকে হাতে হাতকড়া পরিয়ে দাগি আসামির মতো টেনে নেয়া হয় আদালতের এজলাসে। অপরাধ জুলাই অভ্যুত্থানকালে ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারি নিপীড়ন, হামলা এবং বলপ্রয়োগের সংবাদ প্রকাশ। কারান্তরীণ থাকেন প্রায় দুই সপ্তাহ। 

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে সাঈদ খান জানান, রিমান্ডের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বিষহ নির্যাতনের কথা।

তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই আমার হাতে হাতকড়া পড়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আমাকে ফোন কলে নিউজ দিতে হয়েছে। জুলাইয়ের ২৪ তারিখ রাতে বাসা থেকে আমার স্ত্রী-সন্তানদের সামনে থেকে আমাকে তুলে নেয়া হয়। গাড়িতে তুলেই আমাকে বেশ মারধর করা হয়। এরপর চোখ ঢেকে কোথায় নেয়া হয়, তা আর বুঝতে পারিনি। পরে আমাকে হাতকড়া ও লম্বা রশি দিয়ে পশুর মতো বেধে টেনে আদালতে নেয়া হয়। আমাকে আদালতে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমাকে আদালতে তোলা হলো কেন? তখন আমি বিচারককে বলেছিলাম, হাসিনার মতো হায়েনার ডেরায় আপনি আজ এজলাসে, কালকে কাঠগড়ায় চলে আসবেন শুধু তার স্বার্থের বাইরে গেলে। 
 
সেসময় আন্দোলনকারীদের সহযোগী হয়ে ওঠে মাঠের সংবাদকর্মীরা। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আক্রমণাত্মক ভূমিকার সরাসরি বিরোধিতা করেন তারাই৷ উত্তাল জুলাইয়ে সারা দেশে যখন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, তখন সাংবাদিকরাই নানাভাবে ছাত্র-জনতার বিপ্লবী ভূমিকার কথা তুলে ধরেন বিশ্ববাসীর কাছে। এতে ফ্যাসিবাদী নিপীড়নের খড়গ নেমে আসে তাদের ওপরেও। সংবাদ সংগ্রহকালে ঢাকায় তিনজন, সিলেটে দুইজন এবং সিরাজগঞ্জে প্রাণ হারান একজন সংবাদকর্মী।
 
অভ্যুত্থানের এক বছর পার হয়ে গেলেও সাংবাদিক হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার এবং গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংবাদিক নেতা আবু সালেহ আকন৷ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি জানান, শক্তিশালী ও মুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিত না করা গেলে বিগত দিনের মতো বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে গণমাধ্যম।
 
তিনি আবু সালেহ আকন বলেন, বিচারের অগ্রগতিতে আমি সন্তুষ্ট না। এখানে এমন হতে পারতো যে, সাংবাদিক হত্যা এবং সাংবাদিক নির্যাতন নিয়ে আলাদা একটা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেত।
 
তিনি বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক জেলের মধ্যে রয়েছেন, অনেকে পালিয়ে দেশের বাহিরে চলে গেছেন। আমরা যদি নিজেদেরকে সংশোধন না করি, তবে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও এই পরিণতি হবে। যদি মন্ত্রী-এমপিদের পা চেটে উপঢৌকন নিই, তাহলে তো ভবিষ্যতে আমার হাতেও হাতকড়া পড়বে! মানুষ আমাকে থু থু মারবে, পচা ডিম মারবে। তাই সংস্কার আমাকে নিজেকেই হতে হবে যে আমি সংবাদিক, আমি সত্য কথা বলবো। এতে আমার যা হওয়ার হোক। এটাই হলো মূল সংস্কার।’

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়