তুরস্ক থেকে ২৫ হাজার টন চিনি আমদানি, ব্যয় ১৭৬ কোটি টাকা

ফাইল ছবি
টিসিবির মাধ্যমে তুরস্ক থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ১৭৫ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অর্থাৎ প্রতি কেজি চিনির আমদানি মূল্য ধরা হয়েছে ১০৬ টাকা ৬৬ পয়সা।
বুধবার (৬ আগস্ট) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদ।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে আমদানির জন্য তুরস্কের প্রতিষ্ঠান বেগালাতা ডেনিজমানলিক হিজমেটলারি এ.এস, ইস্তাম্বুল-এর একমাত্র প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দরপত্র আহ্বান করা হলেও একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানই প্রস্তাব জমা দেয় এবং সেটি কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ বিবেচিত হওয়ায় টেন্ডার ইভ্যালুয়েশন কমিটির (TEC) সুপারিশক্রমে প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়।
এই চিনি আমদানি করা হবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য, যাতে তারা ভর্তুকিমূল্যে ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে বিতরণ করতে পারে। গত কয়েক মাস ধরে দেশে চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় এবং সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
টিসিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমদানি করা চিনি ভর্তুকিমূল্যে সরবরাহের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত করবে।
বৈঠকে চিনি আমদানির পাশাপাশি আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। এর মধ্যে রয়েছে:
আরও পড়ুন: যতদিন ক্ষমতায় থাকব আর্থিক খাতের সংস্কার চালিয়ে যাব: অর্থ উপদেষ্টা
এলএনজি ও সার আমদানির অনুমোদন
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) ও রাসায়নিক সার আমদানির কয়েকটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়, যার বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ তলা ভবন নির্মাণ
'খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ' প্রকল্পের আওতায় একটি ১০ তলা ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজের পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্রে ৬টি প্রস্তাব জমা পড়ে এবং যৌথভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা এমসিএএল এবং টিবিইএএল-এর প্রস্তাব ১০৫ কোটি ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯১৪ টাকায় অনুমোদিত হয়। দরপত্রের বৈধতা বাড়িয়ে ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত করা হয়েছে।
সিমেন্ট প্রকল্পে ব্যয় হ্রাস
শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘কনভার্সন অব ওয়েট প্রসেস টু ড্রাই প্রসেস অব সিসিসিএল’ প্রকল্পে ব্যয় ২০ লাখ ১৩ হাজার ৩৫৫ মার্কিন ডলার কমিয়ে আনায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা কমিটি। এতে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৭ কোটি ৭৭ লাখ ৬২ হাজার ৪৪৫ ডলার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনা কোম্পানি মেসার্স নানজিং সি-হোপ সিমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড।
চিনি আমদানির এই সিদ্ধান্ত বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, একক উৎস ও একক দরদাতার প্রস্তাব নির্ভরশীলতা তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়। আরও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান ও গুদামজাত ও বিতরণ পর্যায়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সরকারের কার্যকর তদারকি প্রয়োজন।
চিনি, সার ও এলএনজি আমদানির এই সিদ্ধান্ত দেশে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও শিল্পপ্রয়োজনীয় কাঁচামালের চাহিদা পূরণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমদানিনির্ভরতা হ্রাস করতে স্থানীয় উৎপাদনে বিনিয়োগ ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়নে এখনই পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি