News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ৬ আগস্ট ২০২৫

ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচন চেয়ে ইসিকে প্রধান উপদেষ্টার চিঠি

ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচন চেয়ে ইসিকে প্রধান উপদেষ্টার চিঠি

ফাইল ছবি

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রমজান শুরুর আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। 

এই চিঠির মাধ্যমে চলমান রাজনৈতিক পুনর্গঠনের পর প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের সরকারি প্রক্রিয়া শুরু হলো।

বুধবার (৬ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এই চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) দপ্তরে পাঠান। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে একটি “অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন” আয়োজনের প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাচ্ছে। 
এতে উল্লেখ করা হয়, সরকার এ লক্ষ্যে ইসিকে সর্বাত্মক সহায়তা দেবে।

এর একদিন আগে, ৫ আগস্ট, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস” উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন আয়োজনের স্পষ্ট রূপরেখা দেন। 

তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হবে, যাতে তারা সকল প্রস্তুতি শুরু করতে পারে।

চিঠিতে এই ভাষণের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে যে ‘ভোট যেন হয়ে ওঠে এক মহাআনন্দের উৎসব’— সেই প্রত্যাশার ভিত্তিতেই এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিগত পনেরো বছর ধরে নাগরিকরা যে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তা পুনরুদ্ধারই হবে এই নির্বাচনের মূল অঙ্গীকার।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, আগামীর নির্বাচন যেন হয় সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসবমুখর— এমন পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সামাজিক সৌহার্দ্য, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, গণতান্ত্রিক উদ্দীপনা ও ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণীয় একটি নির্বাচন আয়োজনে সরকার নির্বাচন কমিশনের পাশে থাকবে।

আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, আস্থাই বড় চ্যালেঞ্জ: সিইসি

চিঠির শেষাংশে উল্লেখ করা হয়, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার আলোকে ইসি যেন অবিলম্বে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি, সময়সূচি পরিকল্পনা এবং প্রশাসনিক কাঠামো সক্রিয় করে দেয়, যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।

চিঠিটি পাঠানো হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমা ও ধর্মীয় বাস্তবতার সমন্বয় করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে। ফেব্রুয়ারিতে রোজা শুরু হওয়ায় তার আগেই নির্বাচন শেষ করার সময়রেখা নির্ধারিত হয়েছে।

বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক, একতরফা অংশগ্রহণ ও ভোটাধিকার সংকট চলে আসছিল। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল সংবিধান সংস্কার, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন।

ড. ইউনূস তার সাম্প্রতিক ভাষণে স্পষ্টভাবে বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ গঠনের অধিকার কেবল জনগণের। বিগত ১৫ বছরের অবৈধ শাসনের পর এবার জনগণই হবে সিদ্ধান্তের মালিক।

এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন এখন একটি আনুষ্ঠানিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক নির্দেশনা পেল। এর ফলে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি— ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, লজিস্টিকস, পর্যবেক্ষণ কাঠামো, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া, নির্বাচনী বিধিমালা সংশোধন ও ইভিএম বনাম ব্যালট ইস্যু— সবকিছু এখন সামনে এগোবে।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। 

তবে কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানান, তারা সরকার থেকে এ ধরনের নির্দেশনার প্রত্যাশায়ই ছিলেন এবং অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি আগে থেকেই চলছিল।

নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই চিঠি নির্বাচনের টাইমলাইন নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বসম্মত অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়